শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫

                              হয়ে যান ফেইসবুক এক্সপার্ট (পর্ব:৩)


ইদানিং সবার মাথায় একটা ব্যাপার ব্যাপক আকার ধারণ করছে তা হলো ফেসবুক সেলেব্রেটি হওয়া, বিপুল পরিমাণ লাইক এবং ফলোয়ার বৃদ্ধি করার প্রবণতা।  এখনো অনেক লোক আছেন যারা জানেনই না ফেসবুক সেলেব্রেটি কি বা ফেসবুক সেলেব্রেটি কাকে বলে? আসুন তবে জেনে নেই

ফেসবুক সেলেব্রেটি কি?
যাদের প্রফাইলে অতিমাত্রায় ফলয়ার, বন্ধু সংখ্যা অনেক এবং যাদের প্রফাইলের বিভিন্ন প্রকার অ্যাকটিভিটি যেমনঃ  ফেসবুক স্টেটাস, প্রফাইল ছবি এবং অন্যান্য সব কিছুতেই অতিমাত্রায় Like এবং Comment পড়ে এবং ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি।
ফেসবুক সেলেব্রেটি হওয়ার সহজ উপায় ফলোয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এর জন্য প্রয়োজন ফেসবুক অটো ফলোয়ার। অনেক অটো ফলোয়ার সাইট আছে কিন্তু তাদের মধ্য অধিকাংশ গুলো সেফটি প্রদান করে না। তাই আপনাদের সাথে একটি নতুন অটো ফলোয়ার সাইট এর পরিচয় করিয়ে দিব। সাইটের নাম Autofollower.ga। এখান থেকে অটো ফলোয়ার বা অটো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নিলে কোন প্রকার স্পাম হবে না। যেটার ১০০% গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি। এখান থেকে অটো ফলোয়ার এবং অটো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নিয়ে, বর্তমানে আমার ফলোয়ারের সংখ্যা 2.4 k হয়েছে।
নিচে টিউটোরিয়াল সহ দিলাম।
প্রথমে http://www.autofollower.ga/ এই এড্রেস এ আপনাকে যেতে হবে।
এবার Get Access Token বার থেকে এক্সেস টোকেন সংগ্রহ করুন এবং হোম পেজে Login বারে টোকেন বক্সে পেস্ট করে Login বাটনে ক্লিক করুন।

এর পর ড্যাশবোর্ড পেজ আসলে সেখান থেকে আপনার চাহিদা মত বাটনে ক্লিক করুন বা Use AutoFollower অথবা Use AutoAdder বাটনে ক্লিক করুন।

এর পর নতুন পেজ ওপেন হলে সেখান থেকে Get Followers বা Get Adders বাটনে ক্লিক করুন। ফলোয়ার বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেওয়া হয়ে গেলে নিচে Success দেখাবে। এবার Log out বাটনে ক্লিক করুন।

এবার ফেসবুকে গিয়ে দেখুন আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা বেরে গেছে। এভাবে প্রতিদজাবে ৮-১০ বার নিলে কয়েক দিনেই আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা ৫ হাজার বেরে যাবে।

                           মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী(পর্ব:১)


পৃথিবীর উপরে ওই যে নীল আকাশ অসীম শুন্যতা ওর প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরকালের। মহাবিশ্বের ধারনা কিছুদিনের-বিংশ শতাব্দির। তবে আগেকার জোতির্বিদদের ধারনাও উল্লেখ না করলেই নয়। এ সম্পর্কে প্রথম কল্পনা করেন ব্যাবিলনের জতির্বিদদের। খীস্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে তারা কল্পনা করেছিলেন, পারস্য উপসাগরের কাল পানিই সৃষ্টির উৎস। এর গহ্বর থেকে প্রথমে উঠে এসেছে পৃথিবী , তারপর পৃথিবীকে বেষ্টন করার জন্য 'খুবুর' নামক সামুদ্রিক স্রোত। সবশেষে অসংখ্য নক্ষত্র খচিত ন...ীল আকাশ। সেখানকার দেবতা সূর্য এবং সূর্য দেবতাই তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী নক্ষত্রদের ঘুরাচ্ছেন আকাশ পথে।
মিশরীয়রা মনে করত, ঘন তমসাবৃত 'নু' নামে আদিম মহাসাগর থেকে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি।
কুরআনে উল্লেখ আছে, অসীম শূন্যতার মাঝে আল্লাহ তা'আলার আদেশে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়।
বাইবেলে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের আদেশে আদিম মহাসমুদ্রের মাঝখান থেকে উঠে এসেছে নীল আকাশটা এবং ওর বাসিন্দা চন্দ্র, সূর্য ও তারা।
বেদ উপাখ্যানে বলা আছে, আদিতে কোথাও কিছু ছিলনা। তারপর স্রষ্টার নির্দেশে আদিম মহা-অন্ধকার এবং মহা-শুন্যতার মাঝখানে একদিন নিহিত হয় সৃষ্টির বিজ। কোথায় এবং কেমন করে যে নিহিত হয়েছিল, তা কেউ জানে না। এমন কি দেবতারাও না। কেননা দেবতাদের আবির্ভাব এই সৃষ্টির পরে।যাই হোক না কেন, আজকের দিনে বিজ্ঞানের কৃপায় বহু অজানাকে জানা গেছে, প্রকৃতির বহু রহস্য উদ্‌ঘাটনও হয়েছে। তবু বলতে হয় যে বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষের ঙ্গান এখনও প্রাথমিক স্তরে। অবশ্য মানুষের প্রচেষ্টার কোন অন্ত নেই। সহস্র বিজ্ঞানী এখন আজ মাথা ঘামাচ্ছেন এ বিষয়ে।
বিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে কালে কালে বহু তথ্যের আমদানি হলেও প্রকৃত বিজ্ঞান ভিত্তিক তত্ত্বতি প্রদান করেন জর্জ গ্যামো, উইতসেকার প্রমুখ বিজ্ঞানিরা। এটিই বিশ্ব বিখ্যাত 'Big Bang' বা... 'মহা-বিস্ফোরণবাদ' তত্ত্ব। বর্তমানে সবাই এই তত্ত্বটি মেনে নিয়েছেন। বিগ ব্যাং যাচাই করতে গিয়ে ভাল ফলই পাওয়া গেসে। বিজ্ঞানিদের ধারনা, আদিম বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড এত বড় ছিল না। হিন্দু পুরান অনুসারে, আদিতে বিশ্বটা ছিল প্রজাপতি ব্রহ্মার অন্ড সদৃশ। তাই এর নাম ব্রহ্মান্ড। সেই ব্রহ্মান্ড প্রসারিত হতে হতে আজকের এই অকল্পনীয় বিশাল বিশ্ব। প্রসারন এখনও অব্যাহত আছে। বিজ্ঞানিদের বিশ্বাস, আদিম নিরাকার বিশ্বে কোন কিছুই ছিল না এমন নয়; অর্থাৎ মহাশূন্য বলতে যা বুঝায় তা নয়। অতি বিরল ভাবে অবস্থান করছিল কিছু আদিম কনা।আর ব্রহ্মান্ডটার ব্যাপ্তিও কিছু কম ছিল না, যদিও আজকের তুলনায় তা নিতান্তই তুচ্ছ ছিল। আদিম কনিকা গুলো যে কি ছিল সে ব্যাপারে বিজ্ঞানিরা একমত নন। কোন এক সময় কনিকাগুলোর মধ্যে কোন কারণে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক আলোকবর্ষ ব্যাপী ব্যাপ্তির মধ্যে অস্থিরতা যে কোন কারনে আসতে পারে এবং এই অস্থিরতার দরুন আদিম কনিকাগুলো এক বিশাল আয়তনের মধ্যে জড়ো হওয়ার সুযোগ পায়। পরে এটি আবর্তন করতে শুরু করলে সেগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করে এবং প্রকাশ পায় আকর্ষণ বল। পরে আবর্তন বল

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

                               বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছেন যারা (পর্ব:৩)


১৭৫৫ সাল এপ্রিলের মধ্যরাতে জার্মানের মিসেন শহরে দরিদ্র পরিবারে জন্মায় এক শিশু। তখনও কেউ কল্পনা করতে পারেনি এই শিশুই একদিন হয়ে উঠবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান জগতে এক নতুন ধারার জন্মদাতা।
শিশুটির নাম দেওয়া হয় ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হানিম্যান ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্মদাতা বলা হয় হানিম্যানকে। হানিম্যান ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। পিতামাতার প্রথম পুত্র সন্তান। বাবা গডফ্রিড ছিলেন চিত্রকর। তাই বাবার আশা ছিল হানিম্যান বড় হয়ে উঠলে তারই সাথে ছবি আঁকার কাজ করবে।
বাবাকে সহযোগিতা করে পরিবারের দরিদ্র অবস্থার উন্নতি করবে। কিন্তু হানিম্যান-এর আগ্রহ পড়াশোনায়। সে স্কুলে যেতে চায়। বারো বছর বয়সে হানিম্যান ভর্তি হলেন স্থানীয় টাউন স্কুলে। অল্পদিনের মধ্যেই তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ তার স্কুলের শিক্ষকরা।
টাউন স্কুলে শিক্ষা শেষ করে হানিম্যান ভর্তি হলেন প্রিন্সেস স্কুলে।
এদিকে সংসারে অভাব ক্রমশ বেড়েই চলছে। বাবা গডফ্রিডের পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে ছেলে হানিম্যানকেও কাজে লাগিয়ে দিতে হলো। একটি মুদি দোকানে হানিম্যান কাজ শুরু করলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় খুবই হতাশ হলেন।
মেধাবী হানিম্যানের পড়া বন্ধ হোক এটা তারা চাচ্ছিলেন না। তাই তার পড়াশোনার সব খরচ স্কুল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে দিল। শুরু হয় আবার পড়াশোনা। যথাসময়ে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন হানিম্যান ।

পিতার অমতেই লিপজিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য বেরিয়ে পড়েন। হানিম্যানের ইচ্ছে ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করবেন। তখন কোন ডাক্তারের অধীনে থেকে কাজ শিখতে হত। লিপজিকে কোন ভালো হাসপাতাল ছিল না। তিনি ভিয়েনাতে ডাক্তার ফন কোয়ারিনের কাছে কাজ করার সুযোগ পেলেন। তখন তার বয়স মাত্র বাইশ বছর।

এরই মধ্যে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ইংরেজি, ইতালিয়ান, হিব্রু, আরবি, স্প্যানিশ এবং জার্মান ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এবার ভাষাতত্ত্ব ছেড়ে শুরু হলো চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন। হাতে কিছু অর্থ সঞ্চয় হতেই তিনি ভর্তি হলেন আরলাংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই ২৪ বছর বয়সে ‘ডক্টর অব মেডিসিন’ উপাধি অর্জন করেন।

ডাক্তারি পাশ করে এক বছর প্র্যাকটিস করার পর তিনি জার্মানির এক হাসপাতালে চাকরি পেলেন। কিন্তু হানিমানের আগ্রহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে। চিকিৎসা নিয়েই তিনি পড়ে নেই। হুট করেই তিনি বিভিন্ন বই অনুবাদ করা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি অনুবাদক হয়ে উঠলেন।
একবার এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাক্তার কালেনের একটি বই অ্যালোপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা বইটি ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ শুরু করেন। সেখানে একটি অধ্যায়ে দেখতে পেলেন ম্যালেরিয়া জ্বরের ঔষধ কুইনাইন যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা যায় তবে অল্পদিনের মধ্যেই তার শরীরে ম্যালেরিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।

কালেনের বই থেকে পাওয়া এই বক্তব্যটি হানিম্যানের চিন্তার জগতে নাড়া দিল। তিনি পরীক্ষা শুরু করলেন। প্রতিদিন ৪ ড্রাম করে দুবার সিঙ্কোনার(চায়না) রস খেতে থাকলেন। তিন চারদিন পর লক্ষ্য করলেন সত্যিই সত্যিই তিনি ম্যালিরিয়াতে আক্রান্ত হলেন। এরপর পরিবারের প্রত্যেকের উপর এই পরীক্ষা করলেন। প্রতিবারই একই ফলাফল পেলেন। এরপর থেকে মনে প্রশ্ন জাগলো।
এতদিন চিকিৎসকদের ধারণা ছিল মানুষের দেহে অসুস্থ অবস্থায় যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তার বিপরীত ক্রিয়াশক্তি সম্পন্ন ঔষধেই রোগ আরোগ্য হয়। এই প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে শুরু হল তার গবেষণা।

গোটার ডিউক মানসিক রোগের চিকিৎসালয় খোলার জন্য তার বাগানবাড়িটি হানিম্যানকে ছেড়ে দিলেন। ১৭৯৩ সালে হানিম্যান এখানে হাসপাতাল গড়ে তুললেন। এবং একাধিক মানসিক
রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। দীর্ঘ ছয় বছরের অক্লান্ত গবেষণার পর তিনি সিদ্ধান্তে এলেন যথার্থই সদৃশকে সদৃশ আরোগ্য করে।

তার এই আবিষ্কার ১৭৯৬ সালে সে যুগের একটি বিখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটির নাম দেওয়া হলো ( An essay on a new Principle for Ascertaining the curative Powers of Drugs and some Examination of the previous principle.) এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আধুনিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ভিত্তি পত্তন করলেন হানিম্যান- সেই কারণে ১৭৯৬ সালকে বলা হয় হোমিওপ্যাথির জন্মবর্ষ।

হোমিওপ্যাথি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিকশব্দ 'হোমোস' এবং 'প্যাথোস' থেকে। হানিম্যানের এই যুগান্তকারী প্রবন্ধ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসা জগতে প্রায় সবাই এই মতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে গেল।
তার বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় তীব্র সমালোচনামূলক লেখা শুরু হলো। তাকে 'হাতুড়ে চিকিৎসক' উপাধি দেওয়া হলো।
নিজের আবিষ্কৃত সত্যের প্রতি তার এতখানি অবিচল আস্থা ছিল, কোনো সমালোচনাতেই তিনি সামান্যতম বিচলিত হলেন না। তার পড়াশোনা আরও বাড়তে থাকে। গবেষণাও চলতে থাকে।

পরে ১৮০৫ সালে ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশ করলেন ২৭টি ঔষধের বিবরণ সংক্রান্ত বই। এই বইটি প্রথম হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা বা ভেষজ লক্ষণ সংগ্রহ। এরপর থেকেই তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আরম্ভ করেন।

লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক হানিম্যানের চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক করতে চাইলেন। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশ এতে বাধা দিল। কিন্তু তাদের বাধা সত্ত্বেও হানিম্যান সুযোগ পেলেন। এবং একটি বক্তৃতা দিলেন। তার বক্তৃতা শুনে দলে দলে শিক্ষার্থীরা তার মতের সঙ্গে একাত্ম হলো। কৌতূহলীও হয়ে উঠলো।

এ সময় ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ানের সেনাবাহিনী রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছিল। তাদের মধ্যে বহু সংখ্যক সৈন্য টাইফাস রোগে আক্রান্ত। কোনো চিকিৎসাই কাজে দিচ্ছে না। সেই সময় ডাকা হলো হানিম্যানকে। তিনি বিরাট সংখ্যক সৈন্যকে অল্পদিনের মধ্যেই সুস্থ করে তোলেন। এতে তার নাম ছড়িয়ে যেতে শুরু করলো। তারপরও নিজের দেশে সংগ্রাম করেই কাজ করতে হতো হানিম্যানকে।

কিন্তু তার জীবনের মোড় ঘুরে শেষ বয়সে। ১৮৩৪ সালে এক সুন্দরী নারী মাদাম মেলানি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন হানিমানের কাছে। মেলানি ছিলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পালিত কন্যা। হানিমানের সাথে সাক্ষাতের সময় তার বয়স ছিল ৩৫. মেলানি ছিলেন শিল্পী-কবি। বয়সের বিরাট ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে গড়ে উঠলো প্রেমের সম্পর্ক। বিয়েও হলো। মেলানি ফ্রান্স নিয়ে গেলেন হানিম্যানকে। সেখানেই প্রথম সরকারিভাবে হানিম্যান ডাক্তারি পেশা শুরু করেন।
জীবনের শেষ সময়ে এসে হানিম্যান পেলেন সব সংগ্রামের পুরস্কার, খ্যাতি, অর্থ।

৮৮ বছর বয়সে ১৮৪৩ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন যুগান্তকারী এই মহান মানুষটি অর্থাৎ হোমিওপ্যাথির জনক হানিম্যান।
  সেলিব্রিটি (অসাধারণ  ব্যক্তিত্ব )

সেলিব্রিটি (অসাধারণ ব্যক্তিত্ব )

 

এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিল্‌স (বিয়ার গ্রিলস)
জন্ম :   ৭ জুন ১৯৭৪ (বয়স ৪০) , যুক্তরাজ্য
পেশা :  স্কাউট প্রধান, অভিযাত্রিক, লেখক, বক্তা, টেলিভিশন উপস্থাপক
দম্পতি :  সারা কেনিংস
সন্তান  :   জেস, মার্মাডিউক, এবং হাক্‌লবেরি
পিতা-মাতা  :   স্যর মাইকেল গ্রিলস, লেডি গ্রিলস
ব্যক্তিগত জীবন :
বিয়ার গ্রিলস উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডোনাঘাডি এলাকায় ৪ বছর বয়স অবধি শৈশব অতিবাহিত করেছেন। এরপর তিনি তাঁর পরিবারের সাথে বেমব্রিজ অঞ্চলে যান। কনজারভেটিভ পার্টির মরহুম রাজনীতিবিদ স্যার মাইকেল গ্রিলস ছিলেন বিয়ারের পিতা। বিয়ারের মা হলেন লেডি গ্রিলস যার মা প্যাট্রিসিয়া ফোর্ড ছিলেন পেশায় একজন রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য। বিয়ার গ্রিলসের একজন বড় বোন রয়েছেন, তাঁর নাম লারা ফাউসেট। লারা পেশায় একজন টেনিস কোচ। লারাই বিয়ার গ্রিলসের “বিয়ার” নামটি দেন যখন তাঁর বয়স কেবল এক সপ্তাহ।
গ্রিলস ইটন হাউস, লুডগ্রুভ স্কুল, ইটন কলেজে শিক্ষা লাভ করেছেন। ইটন কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি সেখানকার প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। অতি অল্প বয়সেই গ্রিলস তাঁর বাবার কাছ থেকে পর্বতারোহণ এবং নৌচালনা শিখেছেন। তাঁর বাবা নৌচালনায় দক্ষ ছিলেন। কৈশোরেই গ্রিলস স্কাইডাইভিং এবং কারাতে শেখেন। তিনি যোগ ও নিনজৎসু চর্চা করেন। আট বছর বয়সে তিনি কাব স্কাউট হন। গ্রিলস ইংরেজি, স্প্যানীয় এবং ফরাসি ভাষা জানেন। তিনি ধর্মে একজন খ্রিস্টান, এবং তিনি ধর্মবিশ্বাসকে তাঁর জীবনের “মেরুদন্ড” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিয়ার গ্রিলস ২০০০ সালে সারা গ্রিলসকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। তাঁদের নাম জেস, মার্মাডিউক এবং হাক্‌লবেরি।
সামরিক বাহিনীতে চাকরি
বিদ্যালয় জীবন শেষ হবার পর বিয়ার গ্রিলস ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার মনঃস্থ করেন। এসময় তিনি সিক্কিম অঞ্চলে হিমালয়ে হাইকিং করেন। গ্রিলস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ইউনাইটেড কিংডম স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভে কাজ করেন। স্পেশাল এয়ার সার্ভিসে তিনি ১৯৯৬ পর্যন্ত তিন বছর কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে জাম্বিয়ায় গ্রিলস একটি প্যারাশুট দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এসময় গ্রিলসের চিরতরে হাঁটার ক্ষমতা বন্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। পরবর্তী বারো মাস গ্রিলস মিলিটারির সকল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং তাঁর শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের নেশায় উদ্বেলিত হন। মানব সেবায় অবদান রাখার জন্যে ২০০৪ সালে গ্রিলসকে সম্মানসূচক পদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডারে পদোন্নতি দেয়া হয়।
এভারেস্ট জয়
১৯৯৮-এর ১৬ মে বিয়ার গ্রিলস তাঁর শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। আট বছর বয়সে যখন তাঁর বাবা তাকে এভারেস্টের একটি ছবি উপহার দেন, তখনই গ্রিলসের মনে এভারেস্ট জয় করার ইচ্ছা জাগে। এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ হিসেবে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড করেন। তাঁর প্যারাশুট দুর্ঘটনার আঠারো মাস পরেই তিনি এভারেস্টে আরোহণ করেন। জেমস অ্যালেন নামের একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক ২২ বছর বয়সে একটি দলের সাথে এভারেস্ট জয় করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করে রব গন্টলেট নামের এক ব্রিটিশ তরুণ গ্রিলসের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।

গণমাধ্যম
বিয়ার গ্রিলস টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন একটি ডিওডোরেন্টের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত সেনাবাহিনীর মাদক-বিরোধী টিভি ক্যাম্পেইনেও বিয়ার গ্রিলস উপস্থিত হন। এছাড়া বিশ্বখ্যাত হ্যারডস দোকানের বিজ্ঞাপনেও গ্রিলস অংশগ্রহণ করেন। গ্রিলস বেশ কিছু টেলিভিশন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রাইডে নাইট উইথ জোনাথন রোজ, অপরাহ উইনফ্রে শো, দ্য টুনাইট শো উইথ যে লেনো, দ্য লেট শো ডেভিড লেটারম্যান ইত্যাদি। গ্রিলস ইন্টারনেটে পাঁচ পর্বের একটি সিরিজে উপস্থিত হন যেখানে তাকে নগর-জীবনে টিকে থাকার কৌশল দেখাতে হয়। ওয়ার্নার ব্রাদার্স গ্রিলসকে তাদের ক্ল্যাশ অফ দ্য টাইটানস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
বিয়ারের প্রথম রচিত বইয়ের নাম ফেসিং আপ। এটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান পায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে দ্য কিড হু ক্লাইম্বড এভারেস্ট নামে প্রকাশিত হয়। এভারেস্টে তাঁর অভিযান এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত দ্বিতীয় বই ফেসিং দ্য ফ্রোজেন অশেন ২০০৪ সালে উইলিয়াম হিল স্পোর্টস বুক অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। গ্রিলসের তৃতীয় বই বর্ন সারভাইভর: বিয়ার গ্রিলস; এটি পৃথিবীর বেশ কিছু প্রতিকূল পরিবেশে তাঁর টিকে থাকার অভিজ্ঞতা অবলম্বনে রচিত হয়েছে। এটি সানডে টাইমস টপ টেন বেস্ট সেলার তালিকায় স্থান পায়। এছাড়া তিনি বিয়ার গ্রিলস আউটডোর অ্যাডভেঞ্চার নামে একটি বই লিখেন। ২০১১ সালে বিয়ার গ্রিলস আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। এর নাম মাড, সোয়েট অ্যান্ড টিয়ারস: দ্য অটোবায়োগ্রাফি। দুর্গম স্থানে টিকে থাকার কৌশলের উপর শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি বেশ কটি বই রচনা করেন। এগুলো হল মিশন সারভাইভাল: গোল্ড অফ দ্য গডস, মিশন সারভাইভাল: ওয়ে অফ দ্য ওলফ, মিশন সারভাইভাল: স্যান্ডস অফ দ্য স্করপিয়ন, মিশন সারভাইভাল: ট্র্যাক্স অফ দ্য টাইগার।
এস্কেপ টু দ্য লিজিওন
২০০৫ সালে বিয়ার গ্রিলস এবং তাঁর এগারো সহযোগীর ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিওনের আওতায় সাহারা মরুভূমিতে প্রশিক্ষণের উপর এস্কেপ টু দ্য লিজিওন নামে একটি টেলিভিশন শো নির্মিত হয়। এটি যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এছাড়া ২০০৮-এও এটি যুক্তরাজ্যের হিস্টোরি চ্যানেলে পুনঃপ্রচারিত হয়।
 
বর্ন সারভাইভর/ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড
ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড এর একটি পর্বের চিত্রায়নের পূর্বমূহুর্তে তোলা একটি ছবি।

যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এ বর্ন সারভাইভর: বিয়ার গ্রিলস নামে গ্রিলস একটি প্রোগ্রাম করে থাকেন। এটি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড নামে প্রচারিত হয়। এছাড়া ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশীটি আল্টিমেট সারভাইভাল নামে প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, বিয়ার গ্রিলসকে কোন প্রতিকূল পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পরিবেশে প্রতিকূলতার মধ্যে কীভাবে বেচে থাকতে হয় তা গ্রিলস প্রদর্শন করে। ২০০৬ সালে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শুরু হয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় টেলিভিশন প্রোগ্রামে পরিণত হয়। বিশ্বজুড়ে ১.২ বিলিয়ন মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখে থাকে।
এই অনুষ্ঠানে দেখায় বিয়ার গ্রিলস সুউচ্চ পর্বত-শৃঙ্গে আরোহণ করছে, হেলিকপ্টার থেকে প্যারাশুট নিয়ে নামছে, প্যারাগ্লাইডিং করছে, বরফ-আবৃত পাহাড়ে উঠছে, গভীর অরণ্যের আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড়াচ্ছে, সাপ পোকা-মাকড় কীট-পতঙ্গ খাচ্ছে, মরুভূমির কড়া রোদ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রস্রাব-সিক্ত টিশার্ট দিয়ে মাথা আবৃত করছে, সাপের খোলসের মধ্যে প্রস্রাব জমিয়ে রেখে পান করছে, হাতির মল নিঃসৃত তরল পান করছে, হরিণের বিষ্ঠা খাচ্ছে, কুমিরের সাথে যুদ্ধ করছে, সীলের চামড়াকে পোশাকের মত বানিয়ে সাঁতারের সময় হ্রদের হিমশীতল পানি থেকে পরিত্রাণের জন্য তা পরিধান করছে, জলপ্রপাত থেকে ঝাপিয়ে পড়ছে, বাঁশ দিয়ে ভেলা বানিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছে, সাগরের তলদেশে কোন প্রকার যন্ত্রের সাহাযে ছাড়াই মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকার করে খাচ্ছে, প্রতিকূল পরিবেশে আশ্রয় হিসেবে স্থানীয় হিনিস দিয়ে থাকার জায়গা বানাচ্ছে এবং দুর্গম পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এমনি আরো উপায় ও কৌশল সে অবলম্বন করছে।
২০১২ এর মার্চে ডিসকভারি চ্যানেল বিয়ার গ্রিলসের সাথে চুক্তি-সংক্রান্ত মতৈক্যের কারণে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠান নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। 

                               হয়ে যান ফেইসবুক এক্সপার্ট (পর্ব:২){ব্লক থেকে বাচুন}

 
 
যেসব কারনে আপনি Facebook থেকে ব্লক হতে পারেন
১. ফেসবুক স্ট্যাটাসে বা ম্যাসেজে আক্রমাত্মক এমন কিছু লিখবেন না যেটা পড়ে মনে হয় আপনি কাউকে হুমকি দিচ্ছেন এমনটা যদি করেন তাহলে সেই বাক্তি যদি আপনার অ্যাকাউন্টে রিপোর্ট করে তাহলে আপনি কিন্তু ব্লক হতেই পারেন, ভারতীয় ফেসবুক এই অভিযোগটিকে খুবই গুরুত্ব সহ বিচার করে। তাই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট টি থেকে কাউকে হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. আমারা যারা নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট করি তারা ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্ট বন্ধু বাড়ানোর জন্য এক দিনে একাধিক জনকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিই যা মোটেও ঠিক নয়। এই ভাবে সীমা অতিক্রম করলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
৩. একই দিনে যদি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে একই ম্যাসেজ লিখে একাধিক বার ম্যাসেজ করা হয় তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যেটে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি সেই সব ম্যাসেজ করার সময় কিছুটা পরিবর্তন করে করে ম্যাসেজ করুন।
৪. আপনি যদি আপনার নিজের ফেসবুক ওয়ালেও একই টিউন একাধিক বার দেন তাহলে সেটাকে ফেসবুক স্প্যাম ভেবে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে তাই এটা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
৫. আপনি যদি প্রতিদিন একাধিক ফেসবুক ফ্যান পেজে লাইক করেন তাহলে আপনাকে প্রথমে সতর্কবার্তা দেবে। আপনি যদি তাও একি ভাবে কাজটি চালিয়ে যান তাহলে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে।
৬. পর্নোগ্রাফি মানে অশ্লীল ফটো কিংবা ফটো টিউন বা আপলোড করতে আপনি ভালবাসলেও ফেসবুক কিন্তু এটা একেবারেই পছন্দ করে না তাই এই অশ্লীল ফটো ভিডিও টিউন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
৭. আপনি যদি আপনার নাম বাদে ফেক নাম মানে কোন কোন বড় সেলিব্রেটির নাম দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলেন এবং সেই অ্যাকাউন্ট এ অভিযোগ হলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্লক হতে পারে।
৮. আপনি আপনার বাড়ির প্রিয় পোষা বিড়াল বা কুকুর টিকে খুব ভালবাসেন তাই তার নাম দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট করে দিলেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিবে ফেসবুক।
৯. আপনি যদি ভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট টিকে আপনার প্রতিষ্ঠান এর বিজ্ঞাপন এর জন্য ব্যবহার করবেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন এই ভাবে কোন অ্যাকাউন্ট চালালে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্লক হতে বাধ্য।
১০. এছাড়াও প্রচুর পরিমানে বিরক্তি কর ফটো ট্যাগ, ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে এবং সেটা ফেসবুক শনাক্ত করতে পারলেই সেই অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫

                                হয়ে যান ফেইসবুক এক্সপার্ট (পর্ব:১)


এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ফাসেবুকের নাম শুনে নি। সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ওয়েবসাইট প্রায় সবাই ব্যবহার করে। ফেইসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা নানা সমস্যার মখোমুখি হই। তাছাড়া প্রযুক্তি সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। ফেইসবুক ব্যবহার করার অসংখ্য টিপস নিয়ে আপনাদের facebooking কে সহজ করতেই ধারাবাহিক এই টিউন।
টিপস
১। কিভাবে আপনার প্রোফাইল পিকচারটি আনক্লিকেবল করবেন
আমরা কমবেশী সবাই চাই আমাদের ব্যাক্তিগত ছবি ফেসবুকের ফ্রেন্ড ছাড়া সবাই যেন দেখতে না পায়। আপনার ছবিগুলো হয়তো প্রাইভেসি দিয়ে অপরিচিত কাউকে দেখার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন কিন্তু আপনার প্রোফাইল পিকচারটি এক ক্লিকে সকলেই দেখতে পাবে যারা আপনার বন্ধু নয়। তবে এই সমস্যার একটা সমাধান রয়েছে তা নিচে দেওয়া হল:
  • প্রথমেই আপনি আপনার নিজের প্রোফাইলে যান নিজের নামে ক্লিক করে।
  • এখন Photos এ ক্লিক করুন।
  • তারপর Albums এ ক্লিক করে profile picture album সিলেক্ট করুন।
  • আপনার প্রোফাইল ফটোটিতে ক্লিক করে edit এ চাপুন।
  • এখন privacy settings থেকে only me সিলেক্ট করুন।
  • এখন done editing এ ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইল পিকটি আনক্লিকেবল হয়ে যাবে অর্থাৎ যে আপনার ফ্রেন্ড নয় সে এই ছবি ক্লিক করে দেখতে পাবেনা।
২। ফেসবুক চ্যাট থেকে কিভাবে নিজের অনলাইন স্ট্যাটাস হাইড করবেন
ফেসবুক সম্প্রতি নতুন একটা ফিচার চালু করেছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার অনলাইন স্ট্যাটাস হাইড করতে পারবেন। আগে অনলাইন স্ট্যাটাস হাইড করতে চ্যাট অপশনটি সম্পূর্ণ বন্ধ করা লাগতো কিন্তু বর্তমানে আপনি আপনার সুবিধামতো যে কারো জন্য নিজের অনলাইন স্ট্যাটাস হাইড করতে পারবেন।
  • প্রথমে settings এ গিয়ে advance settings এ ক্লিক করুন।
figure 3
  • advance settings এ আপনি দুটা অপশন পাবেন Turn on chat for all friends এবং turn on chat from selected friends।
  • আপনি আপনার পছন্দ মতো অপশন বাছাই করে save বাটন ক্লিক করুন।
figure 4
৩। ফ্রেন্ড লিস্টে না রেখে ফলো করার অপশন চালু করবেন যেভাবে
সাধারণত আমরা ও আমাদের ফেসবুক ফ্রেন্ডরা একে অপরকে ফলো করতে পারি এবং একে অপরের সকল পোস্ট দেখতে পাই। কিন্তু এখানে ফ্রেন্ড আর ফলো এর মাঝে একটা তফাৎ রয়েছে। ফ্রেন্ডরা আপনার সকল পোস্ট দেখতে পাবে তবে ফলোয়াররা শুধু আপনার পাবলিক পোস্টগুলোই দেখতে পাবে। আপনি যদি চান কেউ শুধু আপনার পাবলিক পোস্ট গুলোই দেখুক সেই ক্ষেত্রে আপনি settings থেকে followers এ গিয়ে who can follow me অপশন থেকে everyone সিলেক্ট করুন। এখন যে কেও আপনাকে ফলো করতে পারবে।
৪। কিভাবে একজন ফলোয়ারকে আনফ্রেন্ড না করেই ফলো করা বন্ধ করবেন
আমাদের অনেক ফ্রেন্ড আছে যাদের পোস্ট অনেক সময় আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দারায়। তাদের হয়তো বলতেও পারছেন না যে তার পোস্ট গুলোতে আপনার বিরক্ত লাগছে সেই ক্ষেত্রে তাকে হয়তো আনফ্রেন্ড করার কথা ভাবছেন। তবে ফেসবুকের নতুন ফিচার আপনাকে এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করবে।
এর জন্যে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনার সেই বন্ধুটির প্রোফাইলে যেয়ে following অপশনটি uncheck করতে হবে। এতেই আপনার কাজ হয়ে যাবে কারন আপনার সেই বন্ধুর বিরক্তিকর পোস্ট আর আপনার টাইমলাইনে আসবেনা।

বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

cric.jpg
ক্রিকেটের প্রধান শত্রু ‘ম্যাচ ফিক্সিং’। এই ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে বিভিন্ন সময় অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পেয়েছেন। তবে ক্রিকেট ইতিহাসে ৫জন ক্রিকেটার আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের ওই পাঁচ নিষিদ্ধ ক্রিকেটার হলেন-
 
১. . মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, ভারত
ভারতীয়দের মধ্যে ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক প্রথম গায়ে মেখে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন। ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তবে সরকার দলের এই সংসদ সদস্য (মোরাদাবাদ, কংগ্রেস) আদালতের রায়ে ২০১২ সালে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আইসিসি-র কোন অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না আজহার উদ্দীন।
২. সেলিম মালিক,পাকিস্তান
১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন, টিম মে ও মার্ক ওয়াহকে ঘুষ নেয়ার বিনিময়ে বাজে খেলার প্রস্তাব দিয়ে দোষী সাবাসত্ম হন ২০০০ সালে। প্রথমে আজীবন নিষিদ্ধ হলেও ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
 
৩. হানসি ক্রনিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে তো ম্যাচ ফিক্সিংয়ে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে মারাই গেছেন। ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচে ম্যাচ পাতানোর অপরাধে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট তাকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
৪. দানিশ কানেরিয়া, পাকিস্তান
২০০৯ ইংলিশ কাউন্টি লীগের প্রো-৪০ ম্যাচে এসেক্সের সতীর্থ খেলোয়াড় মারভিন ওয়েস্ট ফিল্ডকে এক ওভারে বেশি রান দেয়ার জন্য অর্থের প্রস্তাব দেয়ায় দোষী সাব্যস্ত হন ৩২ বছর বয়সী কানেরিয়া। পরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে।.
৫. লু ভিনসেন্ট, নিউজিল্যান্ড
প্রথমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের একটি খেলায় ফিক্সয়ের একটি পদক্ষেপের রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় জন্য ৩ বছর নিষিদ্ধ হলেও পরে ইংরেজ ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সয়ের জন্য আজীবন নিষিদ্ধ হন।
(Source-Online)
   বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছেন যারা (পর্ব:২)

বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছেন যারা (পর্ব:২)

            স্টিভ জবস, তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তিনি পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ হিসেবেও স্বীকৃত। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন-এর সাথে একত্রিত হয়ে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার যখন নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নেয়, তখন তিনি অ্যাপলে আবার ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৫ সালে "টয় স্টোরি " নামের একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রও প্রযোজনা করেছেন।
স্টিভ জবস ছিলেন কলেজ পালানো এক যুবক। তরুণ বয়সে মাদকও নিয়েছেন। ঘরছাড়া সন্ন্যাসী হবার ঝোঁকও ছিলো তার। তিনি ভারতবর্ষ ভ্রমণেও এসেছেন। কিন্তু সবকিছুতেই তার মধ্যে একঘেমেয়ি ছিলো। একথা স্টিভ নিজেই স্বীকার করেছেন। স্টিভের নিজের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে, ‘সাফল স্টিভ জবস একঘেমেয়িতে তৈরি।’
এখন চলুন তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
জীবনবৃত্তান্তঃ
স্টিভেন পল জবস ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি  জন্মগ্রহণ করেন।  স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন মিলে ১৯৭০ সালে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি পিক্সার স্টুডিও এবং নেক্সট নামে আরো দুটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। জবস জন্মেছিলেন স্যান ফ্রান্সিস্কোতে। কিন্তু সুখকর ছিলো না তার ছোটোবেলা। জন্মের পরপরই তাকে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়। পল ও ক্লারা জবস দম্পত্তি তাকে দত্তক নেন। তার নাম রাখা হয় স্টিভেন পল জবস। সামান্য ভালো খাবারের জন্য তাকে পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু তার প্রকৃত পিতা মাতা ছিলেন জোয়ন ক্যারোল এবং আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি (সিরিয়া থেকে স্নাতোকোত্তর, পরবর্তীতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছিলেন)। ১৯৬১ জবস পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ এলাকায় বসবাস শুরু করে। এ স্থানটিই পরে সিলিকন ভ্যালিতে রূপ নিয়েছে।
জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানিতে লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৬৮ জবস বর্তমান হিউলেট-প্যাকার্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল হিউলেটের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। বিল হিউলেটের সঙ্গে স্পেয়ার পার্টস নিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি কাউন্টার তৈরির কাজ শুরু করেন। হিউলেটের কেবল জবসকে পুরোনো যন্ত্রাংশই দেনননি এসময় তিনি এইচপিতে জবসের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও করেন। ১৯৭০ এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচিত হন আরেক স্টিভ,  অর্থাৎ স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে। যেখানে পরবর্তীতে তিনি গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসাবে তার সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি হাইস্কুল শেষ করেন এবং পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে ভর্তি হন। সে সময় রিড কলেজ ক্যালিগ্রাফি কোর্সগুলো করাতো। সুযোগে তিনি মূল কোর্স বাদ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি পড়েন। এর ফলেই ডেস্কটপ কম্পিউটারে চমৎকার সব ফন্ট যোগ হয়। এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল

"যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।"

১৯৭৪ সালে জবস ক্যালির্ফোনিয়াতে পুনরায় চলে আসেন। এ সময় তিনি নিয়মিত ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকেন। তিনি ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান "আটারি "  তে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি এসময় মূলত ভারতে যাবার জন্য অর্থ জমানোর চেষ্টা করছিলেন। জবস ভারতে নিম কারোলি বাবার কাইনিচি আশ্রমে তার বন্ধু ড্যানিয়েল কটকের সাথে ভ্রমন করেন। আধ্যত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি ভারতে আসেন ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হন।
কর্মজীবন
১৯৭৩ সালের শেষ দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার লস গ্যাটোসে অ্যাটারি ইনকর্পোরেটেডে প্রকর্মী হিসেবে যোগ দেন জবস। ১৯৭৪ এর মাঝামাঝি সময় জবস ভারত ভ্রমণ করেন। নিম কারোলি বাবার সাথে সাক্ষাত্‍ করার জন্য জবস তার কৈঞ্চি আশ্রমে যান রিড কলেজের বন্ধু ড্যানিয়েল কোটকেকে সাথে নিয়ে। কিন্তু তা প্রায় জনশূন্য অবস্থায় ছিল, কারণ নিম কারোলি বাবা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান। এরপর তারা চলে যান হরিয়াখান বাবার আশ্রমে। ভারতে তারা কয়েকবার বাস ভ্রমণ করেন। দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশ, সেখান থেকে ফিরে হিমাচল প্রদেশ এরপর পুনরায় দিল্লি ফিরে আসেন। সাত মাস অবস্থানের পর জবস ভারত ত্যাগ করেন।
ভারত থেকে ফেরার পর জবসের নতুন আবির্ভাব ঘটে। তার মস্তক মুন্ডিত ছিল এবং তিনি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এছাড়া তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারি হয়ে ওঠেন।
এরপর জবস অ্যাটারিতে ফিরে আসেন এবং আর্কেড ভিডিও গেম ব্রেকআউটের জন্য সার্কিট বোর্ড তৈরির কাজে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। প্রত্যেক চিপের জন্য $১০০ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় অ্যাটারি। সার্কিট বোর্ড ডিজাইনে জবসের একটু বিশেষ জ্ঞান ছিল এবং তিনি ওজনিয়াকের সাথ সমানভাবে ফি ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি করেন, যদি ওজনিয়াক চিপের সংখ্যা কমাতে পারেন। অ্যাটারি ইঞ্জিনিয়ারদের বিস্মিত করে, ওজনিয়াক চিপের সংখ্যা ৫০-এ নামিয়ে আনেন। ডিজাইন এতটাই দূর্ভেদ্য ছিল যে অ্যাসেম্বলি লাইন নকল করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ওজনিয়াকের কাছে থেকে জানা যায় যে অ্যাটারি তাদেরকে মাত্র $৭০০ দিয়েছিল (প্রস্তাবিত $৫,০০০ এর পরিবর্তে), এতে ওজনিয়াকের অংশ দাড়ায় $৩৫০। অবশ্য, ওজনিয়াক ১০ বছর পর আসল বোনাসের পরিমাণ জানতে পারেন। তবে তিনি বলেন যে,

"যদি জবস তাকে এ সম্পর্কে জানাত এবং তার টাকাগুলোর প্রযোজনীয়তা সম্পর্কে বলত তাহলে আমি তা তাকে দিয়ে দিতাম"

টেলিফোন নেটওয়ার্ককে নিপূনভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় টোন উত্‍পন্ন করতে, ওজনিয়াক একটি কম খরচের “ব্লু বক্স” তৈরি করেন। এতে দীর্ঘ দূরত্বের টেলিফোন কল বিনামূল্যে করা যেত। জবস সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এটি বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এই অবৈধ ব্লু বক্সের চোরাগোপ্তা বানিজ্য ভালই চলে এবং এটি জবসের মনে বীজ বুনে দেয় যে ইলেকট্রনিক্স মজাদার এবং লাভজনক হতে পারে।
১৯৯৪ সালে একটি সাক্ষাত্‍কারে, জবস বলেন যে,

"ব্লু বক্স কিভাবে তৈরি করতে হয় তা বুঝে উঠতে আমাদের ছয় মাস সময় লেগেছিল।"

তিনি বলেন যে,

"যদি ব্লু বক্সগুলো তৈরি না হত, তাহলে হয়ত অ্যাপলও থাকত না।"

তিনি আরও বলেন যে,

"এটি তাদেরকে দেখিয়েছিল যে তা বড় কোম্পানিগুলোকে হারিয়ে দিতে পারে।"

১৯৭৫ সালে, জবস ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভায় নিয়মিত উপস্থিত হতে শুরু করেন। তিনি এডুইন এইচ. ল্যান্ডের ব্যাপক প্রশংসা করেন, যিনি ইন্সট্যান্ট ফটোগ্রাফির উদ্ভাবক এবং পোলারইড কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা।
অ্যাপল প্রতিষ্ঠা এবং তারপরঃ-
১৯৭৬ সালে, জবস এবং ওজনিয়াক নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা তাদের কোম্পানির নাম দেন “অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি”। প্রথম দিকে সার্কিট বোর্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে তারা এই কোম্পানি চালু করেন। তখন ওজনিয়াক একক প্রচেষ্টায় অ্যাপল ১ কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন। ওজনিয়াক কম্পিউটারটি জবসকে দেখালে, জবস তা বিক্রয় করার পরামর্শ দেন। এবং তখনই তারা এটিকে বিক্রয়ের জন্য রোনাল্ড ওয়েনকে সাথে নিয়ে জবসের গ্যারেজে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়েন অল্প কিছু দিন ছিলেন। অতঃপর তিনি জবস এবং ওজনিয়াককে ছেড়ে চলে যান। অবশ্য, তিনিও ছিলেন অ্যাপলের প্রাথমিক সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ইন্টেলের তত্‍কালীন অর্ধ-অবসরপ্রাপ্ত পন্য বিপণন ব্যবস্থাপক মাইক মার্ককুলা তাদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
এ বছরই ৬৬৬.৬৬ ডলারে অ্যাপল ১ কম্পিউটার বিক্রি শুরু হয়। ১৯৭৭ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে  প্লাস্টিক কেসে রঙিন মনিটর সমৃদ্ধ অ্যাপল টু বাজারে আসে। এরপর একে একে স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তির অনেক পণ্যই। তখন থেকেই তারা তাদের জনপ্রিয়তার বীজ বুনতে শুরু করে। ব্লু জিনস, টার্টলনেক ফুল হাতা কালো টি শার্ট আর কেডস পরিহিত স্টিভ মানেই আইকনিক অ্যাপল আর সাফল্যের প্রতিমূর্তি। তবে, স্টিভের সাফল্য একবারে আসেনি। তাকেও পার হতে হয়েছে চড়াই উৎরাই। ইনটেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক মিলে যে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাকে নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে, ঘটেছে নানা ঘটনা।
১৯৭৮ সালে, অ্যাপল মাইক স্কটকে প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখে সাধারণ মানুষের জন্য পণ্য তৈরি করতে শুরু করে অ্যাপল। জবসের সম্পদ তখন পর্যন্ত দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন ডলার।
১৯৮০’র দশকের প্রথম দিকে, জবস তাদের একজন ছিলেন যারা জেরক্স পার্কের মাউস নিয়ন্ত্রিত গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেসের বানিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছিলেন, যা জবসকে অ্যাপল লিসা উদ্ভাবনে পরিচালিত করে। এক বছর পর, অ্যাপলের কর্মচারী জেফ রাস্কিন ম্যাকিন্টশ উদ্ভাবন করেন।
১৯৮৩ সালে, জবস পেপসি-কোলার জন স্কালীকে অ্যাপলের প্রধান নিবাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের জন্য প্রলুব্ধ করেন। জবস তাকে জিজ্ঞাসা করেন,

“তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় চিনির পানীয় বিক্রয় করে কাটাতে চাও, নাকি আমার সাথে এসে বিশ্বকে বদলে দিতে চাও?”

“১৯৮৪” শিরোনামে একটি সুপার বোল টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করে। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি, অ্যাপলের অংশীদারদের বার্ষিক সভায় জবস ব্যাপকভাবে উত্‍সাহী দর্শকদের সামনে ম্যাকিন্টশ উন্মোচন করেন।
জবস একজন প্ররোচনামূলক এবং সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও, সে সময়ের তার কিছু কর্মচারী তাকে মেজাজী হিসেবে দেখতেন। বাজারে সুবিধা করতে না পারায় জবসের সাথে স্কালীর কাজের সম্পর্কে অবনতি ঘটে, যা তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। জবস মধ্যরাতেও সভা চালিয়ে যান, লম্বা ফ্যাক্স পাঠান এবং সকাল ৭টায় নতুন সভা আহবান করেন।
স্কালী জানতে পারেন যে জবস পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা একটি অভ্যত্থান সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং মে ২৪, ১৯৮৪ তারিখে, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পরিচালনা পরিষধদের সভা আহবান করেন। অ্যাপলের পরিচালনা পরিষদ স্কালীর পক্ষ নেয় এবং জবসকে ম্যাকিন্টশ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ফেলা দেওয়া হয়। জবস ধীরে ধীরে কাজে আসা বন্ধ করে দেন। মহাকাশচারী হিসেবে স্পেস শাটলে ওড়ার ব্যর্থ প্রয়াস এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি নতুন কম্পিউটার কোম্পানি চালু করার কথা বিবেচনা করে, তিনি অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন। সেপ্টেম্বর ১২, ১৯৮৫ অ্যাপল সিইও জন স্কালি এবং প্রকৌশলীদের কর্পোরেটর ক্যুর কারনে অ্যাপল চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগ করেন জবস। বোর্ড মিটিংয়ে বলেন,

‘আমি অনেক কিছু ভাবছি। এখন আমার পুরো জীবন নিয়ে অ্যাপল থেকে বের হয়ে যাবার সময় হয়েছে। আমাকে এখন কিছু একটা করতে হবে। আমার বয়স ৩০ তো হলো।’

২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেন যে অ্যাপল থেকে বহিষ্কারের ঐ ঘটনাটি ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। তিনি বলেন,

“সফল হওয়ার ভার, নতুন করে শুরু করার আলোয় কেটে গিয়েছিল, সবকিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত ছিলাম। এটি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল আংশে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।”

তিনি আরও বলেন,

“আমি মোটামুটি নিশ্চিত এর কিছুই ঘটত না যদি না আমাকে অ্যাপল থেকে বহিষ্কার করা হত। এটি ছিল ভয়াবহ ওষুধের মত, তবে আমি মনে করি রোগীর এটি প্রয়োজন ছিল।”

নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠাঃ-
এরপরই জবস নেক্সট কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অ্যাপল থেকে পদত্যাগের পর ১৯৮৫ সালে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জবস প্রতিষ্ঠা করেন নেক্সট ইনকর্পোরেটেড (NeXt Inc.) এক বছর পর তার ভীষণ অর্থ সংকট দেখা দেয়, তার কোন পন্যও ছিলনা, ফলে তাকে বিনিয়োগকারীদের সরণাপন্ন হতে হয়েছিল। তিনি বিলিয়নিয়ার রস পেরটের মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যিনি কোম্পানিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেন। নেক্সট ওয়ার্কস্টেশন অবমুক্ত হয় ১৯৯০ সালে, এর মূল্য ছিল ৯,৯৯৯ মার্কিন ডলার। অ্যপল লিসার মত নেক্সট ওয়ার্কস্টেশনও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রবর্তী ছিল। শিক্ষাখাতের জন্য ডিজাইন করা হলেও, অধিক মূল্যের কারণে এটি বাজারে সুবিধা করতে পারেনি। জবস নেক্সটের পন্য বাজারজাত করেন অর্থনৈতিক, গবেষণা এবং শিক্ষাখাতের জন্য। এতে ছিল নতুন ধরণের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, যার মধ্যে ম্যাখ কার্নেল, ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসর চিপ এবং বিল্ট-ইন ইথারনেট পোর্ট উল্লেখযোগ্য। টিম বার্নার্স-লি সার্ন গবেষণা কেন্দ্রে একটি নেক্সট কম্পিউটারেঈ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবন করেছিলেন।
সংশোধিত দ্বিতীয় প্রজন্মের নেক্সটকিউবও ১৯৯০ সালে অবমুক্ত হয়। জবস এটিকে প্রথম ইন্টারপার্সোনাল কম্পিউটার হিসেবে ঘোষণা করেন। এটিতে ছিল নেক্সটমেইল নামক মাল্টিমিডিয়া ইমেইল প্রযুক্তি। নেক্সটকিউবের মাধ্যমে ইমেইলের সাথে প্রথমবারের মত ভয়েস, চিত্র, গ্রাফিক্স এবং ভিডিও চিত্র আদান প্রদানের সুবিধা চালু হয়। জবস সাংবাদিকদের বলন,

“ইন্টারপার্সোনাল কম্পিউটার মানুষের যোগাযোগ এবং দলীয় কাজকর্মে বিপ্লব বয়ে আনবে।”

১৯৯৪ সালে কোম্পানি থেকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে তাদের ১.০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা অর্জিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে নেক্সট সফটওয়্যার ইনকপোরেটেড অবমুক্ত করে ওয়েবঅবজক্টস, যা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপমেন্টের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক। ১৯৯৭ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড কর্তৃক নেক্সট অধিগ্রহনের পর ওয়েবঅবজেক্টস ব্যবহৃত হয় অ্যাপল স্টোর, মোবাইলমি সেবা, এবং আইটিউনস স্টোর তৈরি এবং পরিচালনায়।
পিক্সার এবং ডিজনির সূচনাঃ-
ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৮৬ লুকাস ফিল্ম-এর গ্রাফিক্স গ্রুপ ডিভিশন কিনে নেয় অ্যাপল। এটিই পরে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওতে রূপ নেয়। এর মধ্যে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কোম্পানিটিকে মূলধন হিসেবে দেওয়া হয়। নভেম্বর ২৯, ১৯৯৫ পিক্সারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও নির্বাচিত হন স্টিভ। ডিজনির সাথে অংশীদারিত্বের অধীনে প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র হল টয় স্টোরি , যেটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সেই ছবিতে জবসকে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে দেখানো হয়। মুক্তির পর এটি স্টুডিওর জন্য খ্যাতি এবং সমালোচনা উভয়ই বয়ে আনে। পরবর্তী ১৫ বছরে, পিক্সারের সৃষ্টিশীল প্রধান জন ল্যাসেটারের অধীনে, কোম্পানিটি কিছু বক্স-অফিস হিট চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে। ফাইন্ডিং নেমো, দ্য ইনক্রেডিবলস, র‌্যাটাটুই, ওয়াল-ই, আপ এবং টয় স্টোরি ৩ এই প্রত্যেকটি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমী পুরস্কার পেয়েছে। এই পুরস্কারটি ২০০১ সাল থেকে প্রচলিত হয়।
২০০৩ এবং ২০০৪ সালের দিকে, পিক্সারের সাথে ডিজনির চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে চলে আসার কারণে, জবস এবং ডিজনির প্রধান নিবার্হী মাইকেল ইসনাল চেষ্টা করেও নতুন অংশীদারিত্ব গঠনে ব্যর্থ হন, এবং ২০০৪ এর প্রথম ভাগে, জবস ঘোষণা করেন যে ডিজনির সাথে পিক্সারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তারা নতুন অংশীদারের সন্ধান করবেন।
২০০৫ সালের অক্টোবরে, ইসনারের স্থালাভিষিক্ত হন বব ইগার। তিনি ডিজনির সাথে জবস এবং পিক্সারের সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি, জবস এবং ইগার ঘোষণা করেন যে ডিজনি পিক্সারকে ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অল-স্টক লেনদেনের মাধ্যমে ক্রয় করতে সম্মত হয়েছ। এই লেনদেন শেষ হলে, জবস দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির সবচেয়ে বড় অংশীদারে পরিণত হন, যার পরিমাণ কোম্পানির মোট তহবিলের প্রায় সাত শতাংশ। ডিজনিতে জবসের অংশীদারিত্ব ইসনারের অংশীদারিত্বকেও ছাড়িয়ে যায় (ইসনারের অংশীদারিত্ব ছিল ১.৭ শতাংশ)। এমনকি তা ডিজনি পরিবারের সদস্য রয় ই. ডিজনির অংশীদারিত্বের চেয়েও বেশি হয়ে পড়ে, ২০০৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যার অংশীদারিত্বের পরিমাণ ছিল প্রায় এক শতাংশ। জবস ডিজনির ৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব পেয়ে যান এবং কোম্পানির সবচেয়ে বড় একক অংশীদার হিসেবে পরিচালনা পরিষদে যোগ দেন। জবসের মৃত্যুর পর ডিজনিতে তার অংশীদারিত্ব স্টিভেন পি. জবস ট্রাস্টে স্থানান্তরিত হয়, যা পরিচালনা করেন লরেন জবস।
অ্যাপলে স্টিভের প্রত্যাগমনঃ-
১৯৯৬ সালে, অ্যাপল নেক্সটকে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ক্রয়ের ঘোষণা দেয়। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে লেনদেন চূড়ান্ত হয়। এর মাধ্যমে অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জবসের কোম্পানিটিতে প্রত্যাগমন ঘটে। ১৯৯৭ সালে স্টিভ জবস আবার ফিরে অ্যাপলকে দাঁড় করান। অনেক পরিবর্তন করা হয় এবং অনেক কিছু যোগ করা হয় অ্যাপলে। আগস্ট ৬, ১৯৯৭ মাইক্রোসফট ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে অ্যাপলে। তারপর তারা নভেম্বর ১০, ১৯৯৭ সালে অ্যাপল স্টোর চালু করে।
১৯৯৮ সালের মার্চে, অ্যাপলকে পুনরায় লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করা প্রচেষ্টা হিসেবে জবস নিউটন, সাইবারডগ এবং ওপেনডকের মত কিছু প্রকল্প বন্ধ করে দেন। জবস ম্যাকিন্টস ক্লোনের লাইসেন্সকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনেন, তিনি এটিকে প্রস্তুতকারকদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল করে দেন। নেক্সটকে কিনে নেওয়ার ফলে, এর অনেক পণ্য অ্যাপলের পণ্যে পরিণত হয়, যেমন নেক্সটস্টেপ হয়ে যায় ম্যাক ওএস এক্স। জবসের নির্দেশনার অধীনে, আইম্যাক এবং অন্যান্য নতুন কিছু পণ্য প্রবর্তনের পর কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্যভাবে বাজারে জায়গা করে নিতে শুরু করে। এরপর থেকে, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং শক্তিশালী বিপণন ব্যবস্থা অ্যাপলের জন্য খুব ভালোভাবেই কাজ করতে থাকে। ২০০০ সালে ম্যাকওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে জবস দাপ্তরিকভাবে তার পদ থেকে “অন্তবর্তীকালীন” শব্দটি উঠিয়ে দেন এবং অ্যাপলের স্থায়ী প্রধান নির্বাহীতে পরিণত হন। জবস সে সময় ঠাট্টা করে বলেন যে তিনি “আইসিইও” শিরোনামটি ব্যবহার করবেন। স্টিভ জবস প্রতিষ্ঠানটির পণ্য পরিকল্পনায় ব্যপক পরিবর্তন আনেন এবং প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করতে শুরু করে। এই সিরিজের প্রথম পণ্য ছিলো গান শোনার যন্ত্র আইপড। এরপর পণ্য তালিকায় যোগ হয় আইফোন। মূলত কম্পিউটারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পণ্যের সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় অ্যাপলের জয়যাত্রা।
বহনযোগ্য মিউজিক প্লেয়ার আইপড, আইটিউনস ডিজিটাল মিউজিক সফটওয়ার এবং আইটিউনস স্টোর চালু করার মাধ্যমে কোম্পানিটি ভোক্তা ইলেক্ট্রনিক্স এবং সঙ্গীত বিপণন বাজারে হানা দেয়। ২০০৭ সালের ২৭ জুন, আইফোন অবমুক্ত করার মাধ্যমে অ্যাপল সেলুলার ফোন ব্যবসা শুরু করে। আইফোন হল স্পর্শকাতর পর্দা সমৃদ্ধ একটি সেল ফোন, যার মধ্যে একটি আইপডের বৈশিষ্ট্যসমূহও রয়েছে এবং নিজস্ব মোবাইল ব্রাউজারের মাধ্যমে, এটি মোবাইল ব্রাউজিং এর দৃশ্যপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনে।
জবস তার পণ্য বিক্রয়ে দক্ষতার কারণে প্রসংশা এবং সমালোচনা উভয়ই পেয়েছেন। ২০০৫ সালে, জবস অ্যাপলের বার্ষিক সম্মেলনে কোম্পানির দূর্বল পূনর্ব্যাবহার পদ্ধতির সমালোচনায় সাড়া দেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর, অ্যাপল ঘোষণা করে যে তারা তাদের খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে আইপড ফেরত নেবেন। ২০০৬ সালে, তিনি অ্যাপলের পূনর্ব্যাবহার প্রক্রিয়ার পরিবর্ধন করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোন ক্রেতা নতুন ম্যাক ক্রয় করলেও এই সুবিধা পাবেন।
পাশাপাশি স্টিভ জবসের নেতৃত্বেই দূরদর্শী কম্পিউটিং পণ্য হিসেবে যোগ হয় পাওয়ার ম্যাক, আইম্যাক, ম্যাকবুক, এবং সর্বশেষ যোগ হয় বাজার-ছাপানো আইপ্যাড। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারিতে স্বাস্থ্যগত কারণে দ্বিতীয় বারের মতো ছুটিতে যান ৫৬ বছর বয়সী স্টিভ। তিনি অর্নিদিষ্ট কালের জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। তবে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন  কারণেই সংবাদ শিরোনামে এসেছেন তিনি। তিনি আইপ্যাড ২ বাজারে আনার সময় ছুটি ভেঙ্গে চলে এসেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ছুটিতে থাকলেও অ্যাপলের সব খুঁটিনাটিই খেয়াল করতেন। বিশেষজ্ঞরা তার বিষয়ে বলেন,

‘কাজের লোক, যে কিনা কাজ ছাড়া থাকতে পারে না।’

২০১১ সালের আগষ্টে, জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন। ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেয়ার বাজারে অ্যাপলের পাঁচ শতাংশ দরপতন ঘটে। এই ক্ষুত্র দরপতন অ্যাপলে জবসের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত বহন করে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার স্বাস্থ সমস্যা খবরের শিরোনাম হয়ে আসছিল এবং তিনি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে চিকিত্‍সার জন্য ছুটিতে ছিলেন। ফোর্বস কর্তৃক প্রকাশিত হয় যে জবসের পদত্যাগ অ্যাপলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেই সাথে দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটতে পারে, যেখানে তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ঘোষণার দিন ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির শেয়ারে ১.৫ শতাংশ দরপতন ঘটে।
সকলেই একবার তার এই ভাষণটি দেখুনঃ

বক্তব্যটির বাংলা অনুবাদ:
প্রথমেই একটা সত্য কথা বলে নিই। আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিনি। তাই সমাবর্তন জিনিসটাতেও আমার কখনো কোনো দিন উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এর চেয়ে বড় সত্য কথা হলো, আজকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছে থেকে দেখছি আমি। তাই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। কোনো কথার ফুলঝুরি নয় আজ, স্রেফ তিনটা গল্প বলব আমি তোমাদের। এর বাইরে কিছু নয়। আমার প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন বিন্দুকে এক সুতায় বেঁধে ফেলার গল্প।
ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মাথাতেই রিড কলেজে পড়ালেখায় ক্ষ্যান্ত দিই আমি। যদিও এর পরও সেখানে আমি প্রায় দেড় বছর ছিলাম, কিন্তু সেটাকে পড়ালেখা নিয়ে থাকা বলে না। আচ্ছা, কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম? এর শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগে। আমার আসল মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে এমন কারও কাছে দত্তক দেবেন, যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে। সিদ্ধান্ত হলো এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেবেন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, ওই দম্পতির কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, বিশেষ করে আইনজীবী ভদ্রলোক কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। আমার মা তো আর কাগজপত্রে সই করতে রাজি হন না। অনেক ঘটনার পর ওই দম্পতি প্রতিজ্ঞা করলেন, তাঁরা আমাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, তখন মায়ের মন একটু গললো। তিনি কাগজে সই করে আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন। এর ১৭ বছর পরের ঘটনা। তাঁরা আমাকে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বোকার মতো বেছে নিয়েছিলাম এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ালেখার খরচ প্রায় তোমাদের এই স্ট্যানফোর্ডের সমান।
আমার দরিদ্র মা-বাবার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিল। ছয় মাসের মাথাতেই আমি বুঝলাম, এর কোনো মানে হয় না। জীবনে কী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। অথচ মা-বাবার সারা জীবনের জমানো সব টাকা এই অর্থহীন পড়ালেখার পেছনে আমি ব্যয় করছিলাম। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনে হলো যে এবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ডিগ্রির জন্য দরকারী কিন্তু আমার অপছন্দের কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না, আমি আমার আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে নিতে লাগলাম। পুরো ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই রোমান্টিক বলা যাবে না। কারণ তখন আমার কোনো রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমোতাম। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। এটা আমার খুবই ভালো লাগত। এই ভালো লাগাটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
রিড কলেজে সম্ভবত দেশে সেরা ক্যালিগ্রাফি শেখানো হতো সে সময়। ক্যাম্পাসে সাঁটা পোস্টারসহ সবকিছুই করা হতো চমৎকার হাতের লেখা দিয়ে। আমি যেহেতু আর স্বাভাবিক পড়ালেখার মাঝে ছিলাম না, তাই যে কোনো কোর্সই চাইলে নিতে পারতাম। আমি ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। সেরিফ ও স্যান সেরিফের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো-বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফি কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখলাম। ব্যাপারটা ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্ট। আমি এর মধ্যেই মজা খুঁজে পেলাম। এ ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা কোনো দিন বাস্তবজীবনে আমার কাজে আসবে—এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ১০ বছর পর আমরা যখন আমাদের প্রথম ম্যাকিনটশ কম্পিউটার (আমরা যাকে ম্যাক বলে চিনি) ডিজাইন করি, তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমার কাজে লাগল। ওটাই ছিল প্রথম কম্পিউটার, যেটায় চমৎকার টাইপোগ্রাফির ব্যবহার ছিল।
আমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সটা না নিতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো নানা রকম অক্ষর (টাইপফেইস) এবং আনুপাতিক দূরত্বের অক্ষর থাকত না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের এই ফন্ট সরাসরি নকল করেছে, তাই বলা যায়, কোনো কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত না। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম, তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা অসম্ভব ছিল, কিন্তু ১০ বছর পর পেছনে তাকালে এটা ছিল খুবই পরিষ্কার একটা বিষয়। আবার তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারবে না। এটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভব।
অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবেই। তোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। এটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে। আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প। আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, জীবনের শুরুতেই আমি যা করতে ভালোবাসি, তা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার বয়স যখন ২০, তখন আমি আর ওজ দুজনে মিলে আমাদের বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কোম্পানি শুরু করেছিলাম।
আমরা পরিশ্রম করেছিলাম ফাটাফাটি, তাই তো দুজনের সেই কোম্পানি ১০ বছরের মাথায় চার হাজার কর্মচারীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০, তখন আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিন্টোস বাজারে ছেড়েছি। এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হই। যে কোম্পানির মালিক তুমি নিজে, সেই কোম্পানি থেকে কীভাবে তোমার চাকরি চলে যায়? মজার হলেও আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিল।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগল, তখন কোম্পানিটি ভালোভাবে চালানোর জন্য এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম, যে আমার সঙ্গে কাজ করবে। এক বছর ঠিকঠাকমতো কাটলেও এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার মতের অমিল হতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলে আমি অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হলাম। এবং সেটা ছিল খুব ঢাকঢোল পিটিয়েই। তোমরা বুঝতেই পারছ, ঘটনাটা আমার জন্য কেমন হতাশাজনক ছিল। আমি সারা জীবন যে জিনিসটার পেছনে খেটেছি, সেটাই আর আমার রইল না। সত্যিই এর পরের কয়েক মাস আমি প্রচন্ড দিশেহারা অবস্থায় ছিলাম।
আমি ডেভিড প্যাকার্ড ও বব নয়েসের সঙ্গে দেখা করে পুরো ব্যাপারটার জন্য ক্ষমা চাইলাম। আমাকে তখন সবাই চিনত, তাই এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম না। মনে হতো, ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছিলাম, সেটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। চাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। আমি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেলাম, কোনো চাপ নেই, সফল হওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের কৌশল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আমি প্রবেশ করলাম আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে।
পরবর্তী পাঁচ বছরে নেক্সট ও পিক্সার নামের দুটো কোম্পানি শুরু করি আমি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের, যাকে পরে বিয়ে করি। পিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করি। আর এখন তো পিক্সারকে সবাই চেনে। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও। এরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসি। আর লরেনের সঙ্গে চলতে থাকে আমার চমত্কার সংসার জীবন। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না, যদি না অ্যাপল থেকে আমি চাকরিচ্যুত হতাম। এটা আমার জন্য খুব বাজে আর তেতো হলেও দরকারি একটা ওষুধ ছিল। কখনো কখনো জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো না। আমি নিশ্চিত, যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছিলাম, সেটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।
তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে, ঠিক যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করো। তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা, এটা একটা অসাধারণ কাজ। আর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয়ো না।
তোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবে। যেকোনো ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছ। অন্য কোনোখানে নিজেকে স্থায়ী করে ফেলো না। আমার শেষ গল্পটির বিষয় মৃত্যু। আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে।’ এ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন ‘না’ হতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে।
পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে, এ জিনিসটা মাথায় রাখার ব্যাপারটাই জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ, প্রায় সবকিছুই যেমন, সব অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা আর ব্যর্থতার গ্লানি—মৃত্যুর মুখে হঠাৎ করে সব নেই হয়ে যায়, টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কিছু হারানোর আছে—আমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছ।
তাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে? প্রায় এক বছর আগের এক সকালে আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই আমার। প্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য এই ক্যানসারের কারণে তাঁরা আমার আয়ু বেঁধে দিলেন তিন থেকে ছয় মাস। উপদেশ দিলেন বাসায় ফিরে যেতে। যেটার সোজাসাপটা মানে দাঁড়ায়, বাসায় গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এমনভাবে জিনিসটাকে ম্যানেজ করো, যাতে পরিবারের সবার জন্য বিষয়টা যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়। সারা দিন পর সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো। তাঁরা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিয়ে পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে টিউমার থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে এলেন।
আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন, তাই কিছুই দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল, চিকিৎসকেরা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, তখন তাঁরা কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কারণ, আমার ক্যানসার এখন যে অবস্থায় আছে, তা সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। আমার সেই সার্জারি হয়েছিল এবং দেখতেই পাচ্ছ, এখন আমি সুস্থ। কেউই মরতে চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরতে চায় না। কিন্তু মৃত্যুই আমাদের গন্তব্য। এখনো পর্যন্ত কেউ এটা থেকে বাঁচতে পারেনি। এমনই তো হওয়ার কথা। কারণ, মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্ট। মৃত্যু পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে ‘এসেছে নতুন শিশু’র জন্য জায়গা করে দেয়।
এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, কিন্তু খুব বেশি দিন দূরে নয়, যেদিন তোমরা পুরোনো হয়ে যাবে এবং তোমাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমার অতি নাটুকেপনার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই আসল সত্য। তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট করো না। যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছে। তোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন আর ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবে। ওরা যেভাবেই হোক, এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে, তুমি আসলে কী হতে চাও। এ ছাড়া আর যা বাকি থাকে, সবই খুব গৌণ ব্যাপার।
আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামের অসাধারণ একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো; যেটা কিনা ছিল আমাদের প্রজন্মের বাইবেল। এটা বের করতেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ভদ্রলোক। তিনি তাঁর কবিত্ব দিয়ে পত্রিকাটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। স্টুয়ার্ট ও তাঁর টিম পত্রিকাটির অনেক সংখ্যা বের করেছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স যখন ঠিক তোমাদের বয়সের কাছাকাছি, তখন পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বিদায়ী সেই সংখ্যার শেষ পাতায় ছিল একটা ভোরের ছবি। তার নিচে লেখা ছিল— ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো । এটা ছিল তাদের বিদায়কালের বার্তা– “ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো”।
আমি নিজেও সব সময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আজ তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আরও বড়, নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরও এটা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
ব্যক্তি জীবনে জবসঃ-

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জবস ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন। সে ঘরে তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। এক বান্ধবীর ঘরে আছে জবসের তরুণ বয়সের আরেকটি মেয়ে। ২০০৩ সালে তাঁর শরীরে টিউমার ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার না করায় বিপজ্জনক দিকে মোড় নেয় সেটি। অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হন। কিন্তু ২০০৮ থেকে আবার শরীর-স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরু করে জবসের। ওজন কমে গিয়ে রোগা হয়ে পড়েন। এর পরের বছরও তাঁর স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। তবে ২০১০ সালে প্রচণ্ড কর্মোদ্যমী একজন মানুষ হিসেবে কাজে ফেরেন তিনি। তারপর আবারও অসুস্থতা ঘিরে ধরে তাঁকে। তাই সিইও থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগপত্রে জবস লিখেছিলেন, ‘’আমি সব সময়ই বলি, যেদিন দেখব আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না, সেদিনই আপনাদের জানিয়ে দেব। সে দিনটা এসেছে।’’ জবস তাঁর কথা রেখেছেন। তবে তিনি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন। ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেয়ার বাজারে অ্যাপলের পাঁচ শতাংশ দরপতন ঘটে। এই ক্ষুত্র দরপতন অ্যাপলে জবসের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত বহন করে।
তার মোট সম্পদঃ-
জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র ১ মার্কিন ডলার বেতন গ্রহন করতেন। অবশ্য তার কাছে অ্যাপলের ৫.৪২৬ মিলিয়ন শেয়ার ছিল, যার মূল্য ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও ছিল ডিজনির ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ার, যার মূল্য ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জবস ঠাট্টস্বরূপ বলেন যে অ্যাপল থেকে তিনি বছরে যে ১ মার্কিন ডলার পান, তার ৫০ সেন্ট পান বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং বাঁকি ৫০ সেন্ট পান নিজের কাজের জন্য। ২০১০ সালে ফোর্বসের হিসাব অনুসারে, তার সম্পত্তির পরিমাণ ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
দুঃখের খবর অর্থাৎ তার মৃত্যুঃ-
জবস অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর অ্যাপলের ওয়েবসাইট তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। অ্যাপলের ওয়েবসাইটে স্টিভ জবসের মৃত্যুসংবাদ জানানোর পর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার থেকে শুরু করে  বিশ্বনেতারাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, স্টিভের বন্ধু এবং অ্যাপল সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক, ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গসহ আরো অনেকেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও তাদের প্রথম পাতা জুড়ে স্টিভের স্মরণে আর্টিকেল ছেপেছে। প্রযুক্তিবিশ্লেষকরা তাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্ন প্রযুক্তি সাইটে। টুইটার ফেসবুকেও উঠেছে বিভিন্ন মানুষের শোকের বার্তা। স্টিভের মৃত্যুর খবর শোনার পর বিল গেটস তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন,

‘পৃথিবী গৌরবজনক প্রভাববিস্তারী এক বিরল ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করেছে। আগামী অনেক প্রজন্ম তাকে স্মরণ করবে। আমরা যারা তার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সত্যিই ভাগ্যবান। নিশ্চিতভাবেই এ এক অসম্ভব সম্মানের বিষয়।’

গত শতকের ৭০ দশকের শুরু থেকে কাজ শুরুর পর কম্পিউটর জগতের চূড়োমনি হয়ে ওঠেন জবস ও গেটস। একজন অ্যাপলে, অন্যজন মাইক্রোসফটে। তাদের মধ্যে দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের প্রধান হিসেবে অলিখিত এক প্রতিদ্বন্দিতায়ও ছিলো। দুজন দুক্ষেত্রে সফলও হয়েছিলেন। জবসের সঙ্গে দেখা  প্রায় ৩০ বছর আগে, জানালেন গেটস। মৃত্যুর খবর শুনে তার প্রতিক্রিয়া ছিলো-

‘আমি ভীষণ মর্মাহত। তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমার ও মেলিন্ডার (গেটসের স্ত্রী) সমবেদনা রইলো। সহানূভূতি প্রকাশ করছি সেই সব মানুষের প্রতিও, জবসের কাজ যাদের স্পর্শ করেছিলো।’

কারো প্রশংসা করতে গেলে জবস বলতেন, ‘ইনসেইনলি গ্রেট’। বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একই বাক্যই উচ্চারণ করেছেন গেটস। তিনি আরো বলেছেন,

‘আমি ভাগ্যবান, তার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলাম। তাকে আমি ভীষণ মিস করবো।’

জবসের মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকর্মী স্টিভ ওজনিয়াক জানিয়েছেন,

‘স্টিভের এভাবে চলে যাওয়া আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে। আমার মন বসাতে পারছি না, কিছু করতে পারছি না। এটা যেনো জন লেননের চলে যাওয়া বা জেএফকে (প্রেসিডেন্ট কেনেডি)-এর চলে যাওয়া। আমার মধ্যে সে বিরাট এক শূন্যতা রেখে গেলো।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জবসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানিয়েছেন,

"আমি আর মিশেল স্টিভের মৃত্যুতে খুবই দুঃখ পেয়েছি। মার্কিন উদ্ভাবকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠদের তালিকায় তিনি ছিলেন। তিনি গতানুগতিব ধারা থেকে ভিন্নাভাবে চিন্তা করার মতো যথেষ্টই সাহসী ছিলেন, সাহসী ছিলেন পৃথিবীকে বদলে দেবার মতো ভাবনায় বিশ্বাস করতে। আর সর্বপরি এসব করে দেখানোর ক্ষমতাও তার ছিলো।"

মার্ক জুকারবার্গ, পল অ্যালেন, মাইকেল ডেল, সের্গেই ব্রিন, ল্যারি পেজ, স্টিভ বলমারসহ অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জবস মারা যাবার পরই মিডিয়া জুড়ে তার মৃত্যুর খবরটি শিরোনামে চলে আসে। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউএসএ টুডেসহ অনেক মিডিয়ায় শিরোনাম বসিয়েছে জবসের মারা যাবার খবরটি। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে,

‘ভবিষ্যদ্রষ্টা জবস যিনি ডিজিটাল যুগে সঙ্গীত, মুভি এবং মোবাইল যোগাযোগে সংস্কৃতির পরিবর্তন এনেছেন।’

একরকম বক্তব্য ছেপেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও। ইউএসএ টুডে আরো জুড়ে দিয়েছে

‘মানুষের প্রযুক্তি ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন তিনি। এমনকি পাল্টে দিয়েছেন প্রযুক্তির ব্যবহারও।’

স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর বিশ্লেষকরা বলছেন,

‘অ্যাপলকে পছন্দ বা অপছন্দের তালিকায় ভাগ করা গেলেও স্টিভ একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার বিষয়ে আসলে আমরা খুব বেশি কিছু জানিও না। তিনি আসলে অলক্ষ্যেই অনেক জীবনে প্রেরণাদায়ী এবং জীবন পরিবর্তনের রূপকার। তার কাজকে বিশ্লেষন করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, উদ্ভাবক, অন্বেষা, অনড় একগুঁয়ে আবার চরম নিয়ন্ত্রনাধীন, দক্ষ প্রসাশক এবং নেতা, শিল্পীর চোখ যার আছে ইঞ্জিনিয়ারিং মস্তিষ্ক, দারুন পারিবারিক এবং ‘ক্ষুধার্ত বোকা’। বিশ্লেষকরা তাকে আরো বলছেন, ‘তিনি বিনোদন তৈরি করেছেন, আনন্দ দিয়েছেন এবং নতুনত্ব এনেছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা তিনি নিজের কাজকে ভালোবাসতেন সবচেয়ে বেশি।’

এত কিছু পরার পর নিশ্চয় মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে? তো চলুন জানি অ্যাপল ও স্টিভ জবস সম্পর্কে কিছু মজাদার এবং অজানা তথ্য।
অজানা ও মজাদার তথ্যঃ-

  • স্টিভ জব্‌স এর আসল বাবা আব্দুলফাট্টাহ জান্দালি একজন আমেরিকা অভিবাসী সিরীয় মুসলিম। মা জোন সিম্পসন এর পরিবার একজন আরবীয়কে বিয়ে করতে সম্মতি না দেয়ায় এই অবিবাহিত দম্পতি জব্‌সকে জন্মের এক সপ্তাহ পরই আরমানীয় দম্পতির হাতে তুলে দেন।
    স্টিভ জবসের আসল পিতা মাতা
    স্টিভ জবসের আসল পিতা মাতা

  • বিল গেটস কিংবা মার্ক জুকারবার্গ যেমন গ্রেজু্য়েশন শেষ হবার আগেই কলেজকে বৃড়ো আঙুল দেখিয়েছেন, তেমনি স্টিভ জব্‌স কেবল ১ম সেমিষ্টার এর পাঠ চুকানোর পরই পোর্টল্যাণ্ড এর রিড কলেজকে লাল সালাম জানান। অবশ্য কলেজ ছাড়ার এক বছরের মাথায় তিনি অ্যাপেল প্রতিষ্ঠা করেন।

  • জব্‌স ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কলেজ ছাড়ার পর জব্‌স ভারত ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। জানা গেছে, কোনো এক মঠের সন্ন্যাসী হয়ে জীবন কাটাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন তিনি।

  • জব্‌স উদ্রেককারী মাদক এলএসডি সেবন করেছেন এবং এই অভিজ্ঞতাকে তিনি তার জীবনের দু-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি বলে মনে করেন।

  • ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ের আগে জব্‌স ডায়ান কেটন ও জোয়ান বেইজ এর মত হলিউড তারকাদের সাথে ডেটিং করেছেন। এছাড়াও ক্রিসান ব্রেনান নামক মহিলার সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের সন্তানটিকে তিনি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে তিনি সন্তানটির পিতৃত্ব গ্রহণ করে নেন।

  • ২০ বছর ব্য়সে জব্‌স বন্ধু স্টিভ উজনিয়াক এর সাথে অ্যাপেল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ১০ বছর পর তিনি কোম্পানী থেকে বহিষ্কৃত হন।

  • জব্‌স অনুমেয় ৮ বিলিয়ন এরও বেশি সম্পত্তির মালিক। কিন্তু তিনি কোন প্রকার অনুদানে বিশ্বাসী নন। অ্যাপেল এর সিইও হিসেবে নিযুক্ত হবার পর তিনি সকল প্রকার বিশ্বজনীন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

  • জব্‌স মাছ খেতেন। কিন্তু কোন মাংস খেতেন না।

  • স্টিভ জব্‌স এর বোন মোনা সিম্পসন ৮০ এর দশকের একজন প্রসিদ্ধ লেখিকা।

  • জব্‌স পরবর্তীতে তার প্রকৃত মা ও বোনকে একত্র করেন। কিন্তু কখনো প্রকৃত বাবাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার।

  • কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা অপছন্দ করতেন জবস। আর সন্তানের বাবা হওয়ার পর এই অপছন্দ করার ব্যাপারটা আরও বেশি হয়েছিল। এ বিষয়ে বইটিতে জবসের একটি বক্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। জবস বলেছিলেন, "আমি মনে করি এটি হয়তো আমিও হতে পারতাম যে বাড়ি গিয়ে স্ত্রী এবং সন্তানকে বলছে যে আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। অথবা ২০ বছর পর হয়তো এটা আমার সন্তানের ক্ষেত্রেও হতে পারে। আমি এর আগে কখনও এই বিষয়টি নিয়ে এর আগে কখনও এভাবে চিন্তা করিনি।"

  • জবস তার স্কুলে ষষ্ঠ গ্রেড বাদ দিয়েছিলেন। পরে তার শিক্ষকরা তাকে সপ্তম গ্রেড বাদ দিয়ে একেবারে অষ্টম গ্রেডে প্রমোশন দিয়ে দেন। আর এই ঘটনা দেখে জবসের বাবা-মা তাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক স্কুলে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেন।

  • অল্পতেই রেগে যেতেন জবস। আর তাই তার সাথে কাজ করাও ছিল কঠিন ব্যাপার। একবার জবস ম্যাক টিমের এক প্রকৌশলীকে অপসারণ করে বসেন। পরে সেই টিমের অন্যরা যখন তাকে বলেন যে সে প্রকৌশলীর মতো অভিজ্ঞ কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তখন জবস তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে আবার ফিরিয়ে আনেন।

  • "আমি যখন বেঁচে থাকব না, তখন আমার সৃজনশীল কাজের জন্য সবাই বাহবা দেবে। কিন্তু কেউ জানবে না যে আমিও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারি।", নেক্সটে কাজ করার সময় বলেছিলেন জবস।

  • কলেজ থেকে ড্রপ আউটের পর জবস ওরিগনের একটি আপেল বাগানে চাকরি নিয়েছিলেন যা ছিল তার জীবনের প্রথম চাকরি।

  • স্টিভ জবস মূলত ‘হাফ-সিরিয়ান’। অ্যাপলের কিংবদন্তী সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বাবা ছিলেন একজন সিরিয়ান নাগরিক। তার মায়ের নাম জোন স্কিবল ও পিতা সিরিয়ান ইমিগ্র্যান্ট আবদুল ফাত্তাহ জান্দালি। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তাদের দুজনের দেখা হয়। বাবা-মা দুজনই স্টডেন্ট থাকায় জন্মের পর স্টিভকে দত্তক দেয়া হয়েছিল। স্টিভ জবস ছিলেন পল রেনল্ড জবস ও ক্লারা জবসের পালক সন্তান।

  • স্টিভ জবসের গাড়িতে কখনোই নম্বর থাকত না। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী সেখানে একটি নতুন গাড়ি নম্বর প্লেট ছাড়া ছয় মাস চালানো যায়। আর মিঃ জবস কখনোই একটি গাড়ি ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করেননি!

  • প্রকৃতপক্ষে অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনজন। অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক বেশি পরিচিত হলেও শুরুর দিকে কোম্পানিটির তিনজন প্রতিষ্ঠাতা ছিল। বাকী একজন হচ্ছেন রোনাল্ড ওয়েন, যিনি অ্যাপলের প্রথম লোগোটি এঁকেছিলেন। কিন্তু ঋণের দায়ে ওয়েন তার ১০% শেয়ার মাত্র ৮০০ ডলারে বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান মূল্য ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি!

  • অ্যাপলের প্রথম কম্পিউটার ‘অ্যাপল-১’ এর দাম ধরা হয়েছিল ৬৬৬.৬৬ মার্কিন ডলার। এর পেছনে একটা কারণ আছে। ধারণা করা হয়, স্টিভ ওজনিয়াক সংখ্যা পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করতেন, কেননা ৫০০ বা ৬৬৭ থেকে ৬৬৬.৬৬ টাইপ করা সহজ!

  • স্টিভ ওজনিয়াক এখনও অ্যাপলে চাকুরি করছেন! মিঃ ওজ এখন পর্যন্ত একজন অ্যাপল এমপ্লয়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন। যদিও তিনি সক্রিয়ভাবে কোন কাজে অংশ নেন না, তবুও বার্ষিক ১২০,০০০ ডলার ভাতা পান।

  • পণ্য পরিবহনের কাজে অ্যাপল জলপথের পরিবর্তে আকাশপথ ব্যবহার করে থাকে। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজে মালামাল নিতে ৩০ দিন সময় লাগে। কিন্তু বিমানে নিলে খরচ একটু বেশি হলেও সময় মাত্র ১৫ ঘন্টা। আর জলদস্যুদের কথা তো বাদই দিলাম!

  • অ্যাপলের ওয়েবসাইট ও এর বিজ্ঞাপনচিত্রে যে হাই-রেস্যুলেসন চমৎকার ছবিগুলো দেখা যায়, সেগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজাইন করা না। শত শত উচ্চমান সম্পন্ন আলাদা ক্লোজ-শট ইমেজ একত্রে জোড়া লাগিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়।

  • প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম দিকপাল ও এক সময়কার অ্যাপল সিইও স্টিভ জবসের মৃত্যুর আগে শেষ শব্দটি ছিল ‘ওহ ওয়াও, ওহ ওয়াও, ওহ ওয়াও’… মিঃ জবসের বোন মোনা সিম্পসন একথা জানান।

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৫

 বিশ্বকে  পাল্টে  দিয়েছেন  যারা (পর্ব :১)

বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছেন যারা (পর্ব :১)

 



আইনস্টাইন  এর  জন্ম জার্মানিতে।।আইনস্টাইন  ১৮৭৯ সালের  ১৪ই  মার্চ জার্মানির একটি ছোট শহর উলমে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ  করেন।
পিতা পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাই মাঝে মাঝেই ছেলেকে নানা ধরণের খেলনা এনে দিতে পারতেন। শিশু আইনস্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী, আনমনা ইত্যাদি। এতে করে বেস বিরক্ত হতেন তিনি। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন এবং কিছু না কিছু ভাবতে থাকতেন।
তার একমাত্র সঙ্গী ছিল তার মা। তিনি ভালো বেহালা বাজাতে পারতেন। আইনস্টাইন তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানা সুর শুনতেন। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী। বাবাকে খুব বেশি একটা কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।
সেই আনন্দে ভরা দিনগুলোর মাঝে হঠাৎ কালো দিন ঘনিয়ে এল। তাই সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ত স্বাদ। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।
স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিষাদ হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ারের বই সমূহ। অবসর সময়ে বেহালায় বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন। এরাই ছিল তার সঙ্গী বন্ধু, তাঁর জগৎ। এভাবেই তিনি সময় কাটাতেন।
এই সময় বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।
সুইজারল্যান্ডের একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথমবার তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন সংসারের দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতেই হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে দরখাস্ত করতে আরম্ভ করলেন। অনেকের চেয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার বেশি ছিল কিন্তু কোথাও চাকরি পেলেন না। কারণ তার অপরাধ তিনি ইহুদি।

আইনস্টাইন  ও তার  স্ত্রী 
নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন। এই সময় আইনস্টাইন তার স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। মিলেভা শুধু আইনস্টাইনের স্ত্রী ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তার জীবনসঙ্গী ছিলেন।
আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার। তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন, ‘আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষণা করছি।’
আইনস্টাইনের এই গবেষণায় ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না কোনো যন্ত্রপাতি। তার একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি। অবশেষে শেষ হলো তার গবেষণা। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Annalen der physik-এর অফিসে।
এই পত্রিকায় ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নিলেন।
একদিকে অফিসের কাজ, মিলেভার স্নেহভরা ভালোবাসা, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অবশেষে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হলো তার চারটি রচনা-প্রথমটি আলোর গঠন ও শক্তি সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি অ্যাটমের আকৃতি-প্রকৃতি। তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্টের ক্রমবিকাশের তত্ত্ব। চতুর্থটি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। যা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত করল। এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ বা অন্য কিছুর তুলনা। আইনস্টাইন বললেন আমরা যখন কোনো সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তিনি বলেছেন আলোক বিশ্বজগৎ, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক।
আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়, অন্য কোনো গতির সঙ্গেও এর তুলনা হয় না-এই গতি হচ্ছে আলোকের গতি। এই গতি কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আইনস্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এরই সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন।
বিজ্ঞান জগতে ক্রমশই আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ছিল। বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এখানে তাকে অনারারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হলো। এরপর তার ডাক এল জার্মানির সলসবার্গ কনফারেন্স থেকে। এখানে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনস্টাইন। তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কণাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাঁধনে বাঁধতে পারবে।
আইনস্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক বললেন, আইনস্টাইন যা চিন্তা করছেন সেই পর্যায়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। এর উত্তরে আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ঊ=সপ২ উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।
১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হলো। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনীত করা হলো আইনস্টাইনের সহপাঠী ফ্রেডরিখ এডলারকে। ফ্রেডরিক নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের পরিবর্তে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার তুলনায় আমার জ্ঞান নেহাতই নগণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন ফ্রেডরিখের কথার গুরুত্ব। অবশেষে ১৯০৯ সালে আইনস্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করলেন। জুরিখে এসে বাসা ভাড়া করলেন।
আইনস্টাইন আর কেরানি নন, প্রফেসর। কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক, এখনো তাই। তবে লেকচার ফি বাবদ সামান্য কিছু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুণী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়। এমন সময় ডাক এল জার্মানির প্রাগ থেকে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। মাইনে আগের চেয়ে বেশি। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনস্টাইন। কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এল আইনস্টাইনের। ১৯১২ সালে প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে। এখানে তখন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম কুরি, সঙ্গে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তেজস্ক্রিয়তা আর আইনস্টাইন বলেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এত তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন পথের ধারে গর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। গর্ত থেকে উঠে তাদের সঙ্গে আইনস্টাইনও হাসিতে যোগ দিলেন।
সেই সময় জার্মানিতে কাইজারের পৃষ্ঠপোষকতায় বার্লিন শহরে গড়ে উঠেছে কাইজার তিলহেলম ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানের এতবড় গবেষণাগার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে যোগ দিয়েছেন প্লাঙ্ক, নার্নস্ট, হারের আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু আইনস্টাইন না থাকলে যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। শুধু গবেষণাগার নয়, বহু বিজ্ঞানীকেও কাছে পাওয়া যাবে। একসাথে কাজ করা যাবে। তাকে মাইনে দেয়া হলো বর্তমান মাইনের দ্বিগুণ।
১৯১৪ সালে বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। যখন আইনস্টাইন বার্লিন ছেড়েছিলেন তখন তিনি পনেরো বছরের কিশোর। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফিরে এলেন নিজের শহরে। চেনাজানা পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হলো। সবচেয়ে ভালো লাগল দূরসম্পর্কিত বোন কাছে ফিরে এসেছে। এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে। অল্পদিনেই অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
ছেলেবেলা থেকেই যেখানে সেখানে অঙ্ক করার অভ্যাস ছিল আইনস্টাইনের। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো টেবিলের ওপর। টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে মাটিতে বসে চেয়ারের উপরেই অঙ্ক কষে চলেছেন।
গবেষণায় যতই মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন আইনস্টাইন, সংসারের প্রতি ততই উদাসীন হয়ে পড়ছিলেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন মিলেভা। দুই ছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে গেলেন। কয়েক মাস কেটে গেল আর ফিরলেন না মিলেভা।
এদিকে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়লেন যুদ্ধে। আইনস্টাইন এই যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ব্যথিত হলেন। এরই সাথে সংসারের একাকিত্ব, স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন।
এই সময় অসুস্থ আইনস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলসা। এলসার অক্লান্ত সেবা-যত্নে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠলেন আইনস্টাইন। তিনি স্থির করলেন মিলেভার সাথে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। অবশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হলো। কাইজারের পতন ঘটল। প্রতিষ্ঠা হলো নতুন জার্মান রিপাবলিকের। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। এগিয়ে এলেন ইংরেজ বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।
বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। মানুষ তার জ্ঞানের সীমানাকে অতিক্রম করতে চলেছে। অবশেষে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে নেই। আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে।
পরিহাসপ্রিয় আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।
একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?
আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন, যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যে যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনানের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।
আপেক্ষিক তত্ত্বে জটিলতার দুর্বোধ্যতার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল। পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গিয়েছে ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।
মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।
আমেরিকার এক বিখ্যাত সুরকার জর্জ তার এক বন্ধুকে বললেন, একজন মানুষ কুড়ি বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন, আর ভাবলে অবাক হতে হয় সেই চিন্তাটুকুকে প্রকাশ করলেন মাত্র তিন পাতায়। বন্ধুটি জবাব দিল নিশ্চয়ই খুব ছোট অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।
আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এক কথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেন? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, না।
আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে? আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে-এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।
অবশেষে এল সাধক বিজ্ঞানীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। কিছুদিন ধরেই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা চিন্তা করছিল। কিন্তু সংশয় দেখা গেল স্বয়ং নোবেলের ঘোষণার মধ্যে। তিনি বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেন মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তার আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।
তখন তার ফটো ইলেকট্রিক অ্যাফেক্ট বা আলোক তড়িৎ ফলকে সরাসরি আবিষ্কার হিসেবে বলা সম্ভব এবং এর প্রত্যক্ষ ব্যবহারও হচ্ছে তাই ঘোষণা করা হলো Service to the theory of Physics, especially for the Law of the Photo Electric Effect. আইনস্টাইন তার প্রথমা স্ত্রী মিলেভার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত অনুসারে নোবেল পুরস্কারের পুরো টাকাটা তাকে পাঠিয়ে দেন।
আমেরিকায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য বারবার ডাক আসছিল। অবশেষে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, সেখানে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন। শুধু আমেরিকা নয়, যখন যে দেশেই যান সেখানেই পান সম্মান আর ভালোবাসা।
এদিকে স্বদেশ জার্মানি ক্রমশই আইনস্টাইনের কাছে পরবাস হয়ে উঠেছিল। একদিকে তার সাফল্য স্বীকৃতিকে কিছু বিজ্ঞানী ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে, অন্যদিকে হিটলারের আবির্ভাবে দেশজুড়ে এক জাতীয়তাবাদের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে একদল মানুষ। ইহুদিরা ক্রমশই ঘৃণিত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন জার্মানিতে থাকা তার পক্ষে মোটেই নিরাপদ নয়। কিন্তু কোথায় যাবেন? আহ্বান আসে নানা দেশ থেকে। অবশেষে স্থির করলেন আমেরিকার প্রিন্সটানে যাবেন।
জার্মানি থেকে ইহুদি বিতাড়ন শুরু হয়ে যায়। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন এবার তারও যাওয়ার পালা। প্রথমে গেলেন ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই রওনা হলেন আমেরিকায়। তখন তার বয়স পঞ্চান্ন বছর।
প্রিন্সটনের কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গুপ্তঘাতকের দল যে সাগর পেরিয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছবে না তাই বা কে বলতে পারে। তাই তাকে গোপন জায়গায় রাখা হলো। সেই বাড়ির ঠিকানা কাউকে জানানো হলো না। এভাবে থাকতে তার আর ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে ল্যাবরেটরি থেকে এসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রিন্সটনের ডিরেকটরের বাড়িতে ফোন এল দয়া করে যদি আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বরটা জানান। আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বর কাউকে জানানো হবে না বলে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন ডিরেকটার।
খানিক পরে আবার ফোন বেজে উঠল। আমি আইনস্টাইন বলছি, বাড়ির নম্বর আর রাস্তা দুটোই ভুলে গিয়েছি। যদি দয়া করে বলে দেন। এ এক বিচিত্র ঘটনা, যে মানুষটি নিজের ঘরের ঠিকানা মনে রাখতে পারেন না, তিনি বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যের ঠিকানা খুঁজে বের করেন।
প্রকৃতপক্ষে জীবনের উত্তরপর্বে এসে আইনস্টাইন হয়ে উঠেছিলেন গৃহ সন্ন্যাসী। বড়দের চেয়ে শিশুরাই তার প্রিয়। তাদের মধ্যে গেলে সবকিছু ভুলে যান। শিশুদের কাছে কল্পনার ক্রিসমাস বুড়ো। পরনে কোট নেই, টাই নেই, জ্যাকেট নেই। ঢলঢলে প্যান্ট আর গলা আঁটা সোয়েটার, মাথায় বড় বড় চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঝ্যাটা গোঁফ। দাড়ি কামাতে অর্ধেক দিন ভুলে যান। যখন মনে পড়ে গায়ে মাখা সাবানটা গালে ঘষে দাড়ি কেটে নেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে কী ব্যাপার গায়ে মাখা সাবান দিয়ে দাড়ি কাটা, আইনস্টাইন জবাব দিতেন, দুরকম সাবান ব্যবহার করে কী লাভ?
শুধু নির্যাতিত ইহুদিদের সপক্ষে নয়, তিনি ক্রমশই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছে, দলমত নির্বিশেষে তিনি তাদের সমর্থন করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একদিন মানুষ এই ধ্বংসের উন্মাদনা ভুলে এক হবেই। আর একত্বতার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পাবে তার ধর্মকে।
আইনস্টাইনের কাছে এই ধর্মীয় চেতনা প্রচলিত কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্ম মানবতারই এক মূর্ত প্রকাশ। বিজ্ঞান আর ধর্মে কোনো প্রভেদ নেই, প্রভেদ শুধু দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিজ্ঞান শুধু ‘কি’ তার উত্তর দিতে পারে ‘কেন’ বা ‘কী হওয়া উচিত’ সে উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নেই। অপরদিকে ধর্ম শুধু মানুষের কাজ আর চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারে মাত্র। সে হয়তো মানব জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ বলে দেয় বিজ্ঞান।…তাই ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।
মানবতাবাদী আইনস্টাইন একদিকে শান্তির জন্য সংগ্রাম করছিলেন, অন্যদিকে প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি প্রধানত অভিকর্ষ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকক্ষেত্রের মিলন সাধনের প্রচেষ্টায় অতিবাহিত করেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের পথে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কিন্তু এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতাভিত্তিক চরিত্রে তার সম্পূর্ণ আস্থা ছিল না।
১৯৩৬ সালে হঠাৎ স্ত্রী এলসা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এলসা ছিলেন আইনস্টাইনের যোগ্য সহধর্মিণী, তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী। আইনস্টাইন সব বুঝতে পারেন কিন্তু অসহায়ের মতো তিনি শুধু চেয়ে থাকেন। অবশেষে ১৯৩৬ সালে চিরদিনের মতো প্রিয়তম আইনস্টাইনকে ছেড়ে চলে গেলেন এলসা। এই মানসিক আঘাতে সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেন আইনস্টাইন।
এই সময় পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এই শক্তির ভয়াবহতা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন। পরীক্ষায় জানা গেল পারমাণবিক শক্তি সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ধাতু হলো ইউরেনিয়াম। আর এই ইউরেনিয়াম তখন একমাত্র পাওয়া যায় কঙ্গো উপত্যকায়। কঙ্গো, বেলজিয়ামের অধিকারভুক্ত। বিজ্ঞানী মহল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল যদি জার্মানদের হাতে এই ইউরেনিয়াম পড়ে তাহলে তারা পরমাণু বোমা বানাতে মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করবে না। গোপনে সংবাদ পাওয়া যায় জার্মান বিজ্ঞানীরা নাকি জোর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনস্টাইন উপলব্ধি করলেন তার সমীকরণ প্রমাণিত হতে চলছে। সামান্য ভরের রূপান্তরের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে অপরিমেয় শক্তি। আইনস্টাইন লিখেছেন, ‘আমার জীবনকালে এই শক্তি পাওয়া যাবে ভাবতে পারিনি’।

আইনস্টাইন এর  সাক্ষর 
এদিকে জার্মান বাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করলেন যুদ্ধ জয় করতে গেলে অ্যাটম বোমা তৈরি করা দরকার এবং তা জার্মানির আগেই তৈরি করতে হবে। সকলে সমবেতভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে আবেদন জানাল। যদিও এই আবেদনপত্রে সই করেছিলেন আইনস্টাইন, আমেরিকায় পরমাণু বোমা তৈরির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই তিনি জড়িত ছিলেন না।
শেষ দিকে তিনি চেয়েছিলেন এই গবেষণা বন্ধ হোক। তিনি বিজ্ঞানী মাক্স বোর্নকে বলেন, পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আবেদনপত্রে আমার সই করাটাই সবচেয়ে বড় ভুল। জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলার পর তার বিধ্বংসী রূপ দেখে বিচলিত আইনস্টাইন লিখেছেন,
পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা যাবে-সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃতই ভয়ের কারণ-হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় পেয়ে মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।
১৯৫০ সালে প্রকাশিত হলো তার নতুন তত্ত্ব A generalised theory of Gravitation। মহাকর্ষের সর্বজনীন তত্ত্ব। এত জটিল সেই তত্ত্ব, খুব কম সংখ্যক মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারলেন।
যখন বিজ্ঞানীরা তাকে তার এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে বললেন তিনি সকৌতুক বললেন, কুড়ি বছর পর এর আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছে নতুন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য।
আইনস্টাইন জানালেন প্রকৃতির তত্ত্ব কিছু বুঝলেও মানুষ রাজনীতির কিছুই বোঝেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ শুধু শোভাবর্ধনের জন্য। শোভা হলেও তার বিবেক যা মানতে পারবে না তাকে তিনি কখনোই সমর্থন করতে পারবেন না।
বিশ্বের  উর্বরতম  মস্তিষ্ক 
জীবন শেষ হয়ে আসছিল, এই সময়ে ইংরেজ মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের অনুরোধে বিশ্ব শান্তির জন্য খসড়া লিখতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তার জীবন শেষ হলো। তার ইচ্ছা অনুসারে মৃতদেহটা পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হলো। শোনা যায় পরীক্ষার জন্য তার ব্রেইন কোনো গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে সম্বন্ধে কেউই আর কোনো কথা প্রকাশ করেনি।

“আলবার্ট আইনস্টাইন” এর জীবনের কিছু মজার ঘটনাঃ-

আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।
  • ১. আইনস্টাইন বিশ্বখ্যাত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য। কিন্তু কে কী ভাবত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে? জার্মান বা ফরাসীরা? ১৯৩০-এর দশকে সরবোনে (Sorbonne) বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ বিষয়ে বলেন, ‘যদি আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হয়, তবে জার্মানি আমাকে জার্মান হিসেবে দাবি করবে। আর ফ্রান্স বলবে যে আমি পুরো বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু যদি তত্ত্বটা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে ফ্রান্স বলবে, আমি একজন জার্মান এবং জার্মানি বলবে আমি হলাম ইহুদি।’
  • ২. ১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভ্রমণে বেরিয়েছেন আইনস্টাইন। সেখানে ‘যুব সংঘ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। সমাজের নানা বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আইনস্টাইন। একবার আইনস্টাইন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, এখানে নারী-পুরুষে সম্পর্ক কেমন?’ এ প্রশ্নশুনে ওই তরুণী লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন অধ্যাপক, এখানে কিন্তু একজন পুরুষের একটিই স্ত্রী।’ একটু হেসে তাঁর হাতখানা ধরে আইনস্টাইন বললেন, ‘না, না। আমার প্রশ্নটা ওভাবে নিয়ো না। আমরা পদার্থবিজ্ঞানীরা “সম্পর্ক” কথাটা দিয়ে সহজ কিছুকে বোঝাই। আমি আসলে জানতে চেয়েছি, এখানে কতজন নারী আর কতজন পুরুষ মানুষ।’
  • ৩. মানুষ মাত্রই কি ভুল হয়? নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কী ভাবতেন আইনস্টাইন? ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’
  • ৪. আইনস্টাইনকে প্রাচীন গণিতের ইতিহাসবিদ অটো নিউগেব্যুর বলেছেন, ‘কিংবদন্তি’। কিন্তু এই কিংবদন্তি মানুষটি তুলনামূলক দেরিতে কথা বলতে শেখেন। ফলে তাঁর মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তো, একদিন রাতে খাবার টেবিলে সবাই আছেন। আইনস্টাইনও। হঠাৎ তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘এই স্যুপটা খুবই গরম।’ উহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মা-বাবা। ছেলের মুখে প্রথম বুলি শুনে তাঁরা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর আগে কেন তুমি কোনো কথা বলোনি?’ জবাবে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ, এর আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল!’
  • ৫. অনেকের কাছে অঙ্কের সমার্থক শব্দ আতঙ্ক। তো, একবার ১৫ বছর বয়সী এক তরুণী আইনস্টাইনের কাছে সাহায্য চাইল। গণিতের ওপর বাড়ির কাজ বা হোম ওয়ার্ক সে সঠিকভাবে করতে পারছিল না। তরুণীর কাছে অঙ্ক এমনিতেই আতঙ্কের নাম। আইনস্টাইন ওই তরুণীকে বলেছিলেন,‘গণিতের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে গণিত তার চেয়েও কঠিন।’
  • ৬. একবার এক ছাত্র আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল, ‘গত বছর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন পড়েছিল, এবারের পরীক্ষায়ও ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নই পড়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘কিন্তু এ বছরের উত্তরগুলো আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা!’
  • ৭. একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, দুধ পানকরতে ইচ্ছা করছে। ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’
  • ৮. এক সহকর্মী আইনস্টাইনের কাছে একবার তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। তখন আইনস্টাইন একটা টেলিফোন বই খুঁজেবের করলেন এবং সে বইতে তাঁর নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন। তখন সহকর্মীটি বললেন,‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না। তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিষ্ক খরচ করবেন কেন?’
  • ৯. ১৯৩১ সালে চার্লি চাপলিন আমন্ত্রণ জানালেন আইনস্টাইনকে। তখন সিটি লাইটস সিনেমার স্কিনিং চলছিল চাপলিনের। তো যখন চাপলিন ও আইনস্টাইনশহরের পথ ধরে যাচ্ছিলেন, অনেক মানুষ ভিড় জমায়। চাপলিন আইনস্টাইনকে বললেন,‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে। এজন্যই আমার যত জনপ্রিয়তা। তা আপনাকে মানুষ এত পছন্দ করে কেন, বলতে পারেন?’ ‘আসলে’, আইনস্টাইন বলছেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতেই পারে না বলে আমাকে এত বেশি পছন্দ করে!’
  • ১০. স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকেএকবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।’
  • ১১. বিখ্যাত ভাষ্কর জেকব এপস্টিন একবার আইনস্টাইনের একটি আবক্ষ মূর্তি খোদাই করছিলেন। আইনস্টাইন নিজেই মডেল হয়ে ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে শিল্পীকে সাহায্য করতেন। সে সময় একদিন তিনি জেকবকে বলেন,’’ প্রায় শ’খানেক বিজ্ঞানী বই লিখে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমার থিওরী যদি ভুল হয়, তবে এতজনের দরকারটা কী? একজন বললেই যথেষ্ট।
  • ১২. একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেল স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় কী? রেল স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ফিরে চলল গাড়্রির বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেল স্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,’’আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?’’ এমনই সহজ সরল আর সাধারণ ছিলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। এত বড় বিজ্ঞানী অথচ মনে এতটুকু অহংকার ছিল না।
  • ১৩. আইনস্টাইন যে কত সহজ সরল ছিলেন তা বোঝা যায় তাঁর আরেকটি মজার ঘটনায়। আপেক্ষিকতা তত্ব আবিষ্কার করে তিনি তখন বিখ্যাত ও বিতর্কিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী কারোর মগজের এন্টেনাই ব্যাপারটা ক্যাচ করতে পারছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উদ্ভাবিত তত্ত্বটি বোঝাতে লেকচার দিতে যেতেন। প্রায় সব সেমিনারে তিনি একই ধরনের আলোচনা করতেন। একবার এমনি এক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন, লেকচার দেবার জন্য। পথিমধ্যে তাঁর ড্রাইভার করে বসল এক আজব আবদার।বলল, ‘’স্যার, আপনার লেকচারগুলু শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ একদিনের জন্য আমি আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে বক্তব্য চাই।‘’ মজার মানুষ আইনস্টাইনেরও কথাটা খুব মনে ধরল। তিনি এক কথায় রাজি। দেখাই যাক না, ব্যাপারটা কী হয়? তো, ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে অনুষ্ঠানে গেল বক্তব্য দিতে আর স্বয়ং আইনস্টাইন দর্শক সারিতে বসে রইলেন আইনস্টাইনেরই ড্রাইভার হয়ে। তখন তো আর মিডিয়ার এত দৌরাত্ন্য ছিল না। তাই ব্যপারটা কেউ বুঝতে পারল না। আইনস্টাইনরূপী ড্রাইভার মঞ্চে বক্তব্য রাখল এবং চমৎকার বক্তব্য রাখল।দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ আইনস্টাইন বার বার হাত তালি দিতে লাগলেন।অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত একজন আইনস্টাইনের ড্রাইভারের কাছে যেয়ে বললেন, ‘’ আপনার বক্তব্যটি আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কি জানেন, আমি এই অমুক অমুক বিষয়গুলু একদম বুঝতে পারিনি। আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে বিষয়গুলু বুঝিয়ে দেবেন?’’ আইনস্টাইনের ড্রাইভার বিন্দু মাত্র না ঘাবড়ে উত্তর দিল,’’ওহ! এই ব্যাপার? এই ব্যাপারটা তো আমার ড্রাইভারই বুঝিয়ে দিতে পারবে। চলুন তার কাছেই যাই।
  • ১৪. একবার আইনস্টাইনকে সফলতা লাভের একটি গাণিতিক ফর্মুলা দিতে বলা হল। তিনি বলেছিলেন,’’ X+Y+Z=A, যেখানে X=কাজ, Y=খেলাধুলা আর A=সফলতা।‘’ ‘’আর মানে Z কী?’’ আবারও জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে। ‘’তোমার মুখ বন্ধ রাখা‘’, আইনস্টাইনের উত্তর।
  • ১৫. আইনস্টাইন তাঁর জটিল আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটি সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠিক এইভাবে,’’যখন তুমি একজন সুন্দরী মহিলার পাশে বসে থাকো তখন দু’ঘণ্টাকে মনে হয় দু’ মিনিট; আর যখন তুমি দু’ মিনিট গরম চুলার পাশে বসে থাকো তখন দু’মিনিটকে মনে হয় দু ঘণ্টা। এটাই হল আপেক্ষিকতাবাদ।‘’ আর রেডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘’তুমি টেলিগ্রাফের তার দেখেছ। মনে করো, এটা লম্বা, অনেক লম্বা একটা বিড়াল।তুমি নিউইয়র্কে বসে এর লেজে টান দেবে, ওদিকে লস এঞ্জেলেসে এর মাথা মিউ মিউ করে উঠবে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছ? বেতার ঠিক এভাবেই কাজ করে। তুমি এদিকে ইশারা দাও, ওদিকে সাড়া পড়ে। পার্থক্য হল এই বেতারের ক্ষেত্রে বিড়াল বলে কিছু উপস্থিত নেই।
  • ১৬. এত সুন্দর ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারেন, তিনি কিন্তু অনেক সময় জীবনের সহজ ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতেন না। একবার আইনস্টাইন বাড়ি বানালেন। একদিন তিনি বাড়িটা কেমন হল তা দেখতে গেলেন। ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর ছোট্ট বিড়ালছানাটি ঘরে ঢুকবে কি করে? তার জন্য তো কোন আলাদা ছোট দরজা বানানো হয় নি। আসলে যাঁরা অনেক বড় মানুষ, তাঁরা সব সময় বড় বড় চিন্তায় মগ্ন থাকেন তো, তাই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো তাঁরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই ছোট্ট ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারলেন না।অবশেষে তাঁকে খুশি করার জন্য বড় দরজার পাশে আরেকটি ছোট দরজা তৈরি করে দেওয়া হল, যেন তাঁর আদরের বেড়ালছানাটি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেড়ালছানাটি কোন দরজা ব্যবহার করত তা আইনস্টাইনই ভাল বলতে পারবেন।
  • ১৭. গুজব আছে, সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনেরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনেরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘’চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।‘’ আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘’আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?‘’ এর উত্তরে মনেরো কী বলেছিলেন তা অবশ্য আমি অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি।
  • ১৮. তিন হাজার শব্দের মধ্যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব যে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। ‘বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই অংশ নিইনি। আমার বিশ্বাস হয়নি তিন হাজার শব্দে এটা ভালো বোঝাতে পারতাম আমি’−মন্তব্য করেন আইনস্টাইন।
  • ১৯. কাজে যাওয়ার আগে প্রায়ই ভালো পোশাক পরে যাওয়ার আইনস্টাইনকে অনুরোধ-উপরোধ করতেন তাঁর স্ত্রী। বেশির ভাগ সময়ই তিনি জবাব দিতেন, ‘আমি কেন এটা করব? সেখানে সবাই আমাকে চেনে।’ তারপর আইনস্টাইনের প্রথম বড় ধরনের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন আবার তাঁকে একটু ভালো কাপড়চোপড় পরে সেখানে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন তাঁর স্ত্রী। এবার তিনি জবাব দিলেন, ‘কেন আমি এটা করব? সেখানে কেউই তো আমাকে চেনে না।’
  • ২০. ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটনে পৌঁছানোর পর গবেষণার জন্য তাঁর কী কী প্রয়োজন হবে জিজ্ঞেস করা হলে আইনস্টাইন জানালেন, ‘একটি ডেস্ক, কিছু প্যাড, একটা পেন্সিল আর সব শেষে আমার ভুলগুলো ফেলার জন্য বিশাল একটা ময়লার ঝুড়ি।
  • ২১. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
  • ২২. অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চমৎকার এক বুদ্ধি বের করেন আইনস্টাইন। বাড়িতে কেউ আসার কিছু সময় পরই এক বাটি স্যুপ নিয়ে কামরায় ঢোকে এক গৃহপরিচারক। যদি তিনি এটা গ্রহণ করেন, তবে অতিথি ধরে নেন তিনি এখন খাবেন এবং মানে মানে কেটে পড়াই তাঁর জন্য শ্রেয়। অন্যদিকে আইনস্টাইনের যদি কথা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে স্যুপটা এক পাশে সরিয়ে দেন, যেন-বা এটা এখানে ছিলই না।
  • ২৩. ১৯৩০ সালে আমেরিকার উদ্দেশে বার্লিন ত্যাগ করেন আইনস্টাইন। বার্লিন রেলস্টেশনে পৌঁছেই স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। যা হোক, একসময় খুঁজে পেলেন তাঁকে। তারপরই টিকিট জোড়া হারিয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল তাও, আর এভাবেই শুরু হলো তাঁর দ্বিতীয় আমেরিকা যাত্রা।
  • ২৪. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
  • ২৫. ভবিষ্যতে কী আছে? আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করি না। কারণ, এটা এমনিতেও তাড়াতাড়িই আসে।
  • ২৬. বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অন্যতম আলবার্ট আইনস্টাইন। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (The Theory of Relativity) আবিষ্কারের জন্য তিনি আমাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার তিনি কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পাননি। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর এই তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। কেউ যদি এই আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি পড়ে বলে, ‘’বুঝেছি’’ তাহলে নাকি বুঝতে হবে যে, সে কিছুই বুঝেনি। তত্ত্বটি এত গোলমেলে যে, এটি না বোঝাই স্বাভাবিক, বুঝতে পারাটাই যেন অস্বাভাবিক। আর তাই হয়ত রয়েল সুইডিশ একাডেমির জুরিবোর্ড আইন্সটাইনের তত্ত্বটির নিগূঢ় অর্থটি বুঝাতে পারেনি। তাই সে বছর নোবেল পুরষ্কার আইনস্টাইনের কপালে না জুটলেও ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া (Photo Electric Effect) ব্যাখ্যা করে, তিনি পেলেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার।
  • ২৭. এক পার্টিতে আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী প্রশ্ন করলেন, আপনি কি করেন?
    আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র।
    তরুণী অবাক হয়ে বললেন, আপনি এখনও ছাত্র! আর আমি গত বছর পাশ করেছি..
  • ২৮. আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উনি উনার মেয়েকে বললেন তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসতাছি। মেয়ে অনেক বারন করা সত্বেও উনি গেলেন, ৩০ মিনিটের কথা বলে উনি যখন না এলেন তখন সবাই মিলে উনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর উনার মেয়ে যখন বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল আর আসে নাই। তখন উনি আইনস্টাইন এর খোজে ল্যাবে গেল। ল্যাবে গিয়ে দেখল যে তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ড এর সামনে গিয়ে কি জানি চিন্তা করছিল। মেয়ে বাবা কে বলল বাবা কি কর। তখন উনি বলল যে মা তুমি চার্চে যাও আমি এই কাজ টা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি।
    
 আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মত রহস্যময়তার মধ্যেই মৃত্যু ঘটে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের। তাঁর মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর মাতৃভাষা জার্মানে কিছু একটা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তখন তাঁর পাশে থাকা আমেরিকান নার্স কথাটির বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারেনি। মৃত্যুর আগে শেষ কী কথা তিনি বলে গেছেন, তা আমাদের জানা হবে না আর কোন দিন।আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।১৯৫৫-এর ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ প্রিন্সটন সিম্ফনি আইনস্টাইন স্মারক সংগীত বাদনের আয়োজন করে।
আইনস্টাইন বিভিন্ন ধরনের বেহালা বাজিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একসময় দেখলেন সহজভাবে বাঁ হাত আর তুলতে পারছেন না, তিনি বেহালা রেখে দিলেন।